ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁ যুগের শুরু

ফ্রান্সের ২৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে রোববার শপথ নিয়েছেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশটির ইতিহাসে মূলধারার রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট ভবন এলিসি প্রাসাদে তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক শাসনভার গ্রহণ করেন। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তার এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্যারিসজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। খবর বিবিসি ও এএফপির আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন প্রেসিডেন্ট ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ আর্ক দে ট্রিয়োমফে পরিদর্শন করেন। সেখানে নিহত সেনাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ম্যাক্রোঁ। ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ফ্রান্সে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা এখনও বহাল রয়েছে। শপথগ্রহণের পর প্রথম কার্যদিবস সোমবারই (আজ) ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। আগামীকাল মঙ্গলবার গঠিত হবে নতুন সরকার। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সপ্তাহটি খুব ব্যস্ত থাকবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতার প্রথম দিন সোমবার জার্মানি সফর করবেন ইউরোপপন্থী এ প্রেসিডেন্ট। এদিন বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় ইইউয়ের সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়েই ফ্রান্সকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ম্যাক্রোঁ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালের পর ফ্রান্সের রাজনীতিতে বাম ও ডানপন্থী রাজনৈতিক প্রধান দুটি ধারার বাইরে ম্যাক্রোঁই প্রথম ব্যক্তি, যিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ব্যর্থ ওলান্দের বিদায় : পাঁচ বছর ক্ষমতার কঠিন সময় পার করে রোববার বিদায় নিয়েছেন ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ। কর্মসংস্থানের অভাব, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বারবার সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে সমাজতান্ত্রিক এ প্রেসিডেন্টকে। চার্লি হেব্দো থেকে শুরু করে প্যারিস হামলা, নিস হামলার মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রোশের শিকার হয় ফ্রান্স। ২০১২ সালে দেশটির ২৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন ওলান্দ। তিনি তার ক্ষমতার এ সময়কে ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। সন্ত্রাসবাদ দমনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে মূলত সমালোচিত হয়েছেন তিনি। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর ওলান্দ বলেছিলেন, যখন সন্ত্রাসীরা এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটায় তখন তাদের এটা জেনে রাখা ভাল যে, একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ঐক্যবদ্ধ ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে দেশটিতে। ওলান্দের ক্ষমতার সময়ে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে সবচেয়ে বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে দেশের মধ্যেই বেশি সমালোচিত তিনি। ১০ লাখ ইউরোর বেশি আয়ের ওপর ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত করারোপ করায় ব্যবসায়িক, ক্রিড়া মহলসহ সব স্তরের মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এর কর আইন পুরোপুরিভাবে এখনও আরোপিত হয়নি এবং চূড়ান্তভাবে আবার পরিত্যাগও করা হয়নি। কিন্তু এতে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক মহলে ফ্রান্সের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর ওলান্দ ফরাসি মডেল জুলি গায়েটের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন। প্যারিসে মোটরবাইকে করে ওই তরুণীর অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার সময় এক ট্যাবলয়েড পত্রিকার ক্যামেরায় ধরা পড়েন ওলান্দ। প্রেমের কোনো ঘটনায় একজন প্রেসিডেন্ট রাস্তায় মোটরবাইক দাবড়ে বেড়াচ্ছেন, ভাবা যায়! এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে বান্ধবী ভ্যালেরিয়ে থ্রিয়েরউয়েলার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তবে ওলান্দের চার সন্তান দেশটির পরিবেশমন্ত্রী সেজোলেন রয়ালের গর্ভে জন্ম নেয়া। ২০১৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।

No comments

Powered by Blogger.