হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ যাত্রীরা

রাজধানীর গণপরিবহনে হিজড়াদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন যাত্রীরা। দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি না হলেই নেমে আসে খক্ষ। নানা কায়দায় যাত্রীদের নাজেহাল করা শুরু হয়। গালাগালির পাশাপাশি চলে নানা অঙ্গভঙ্গি। হিজড়াদের এমন আচরণে নারী ও শিশু যাত্রীরা রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। অনেকেই ভয়ে কুঁকড়ে যান। গত দুই সপ্তাহ সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে এমনই চিত্রই দেখা গেছে। রাজধানীতে হিজড়াদের অন্তত ৫০ জন গুরু রয়েছে। এরাই শিষ্যদের দিয়ে বাসে বাসে চাঁদাবাজি করাচ্ছে। আর এভাবে গুরুদের প্রত্যেকেই কোটিপতি বনে গেছে। এদিকে হিজড়াদের এই উৎপাতের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে হিজড়াদের গ্রেফতার করতে গেলে রীতিমতো ঝামেলায় পড়তে হয়।’ গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শ্যামলী থেকে ঠিকানা পরিবহনে ওঠে দুই হিজড়া। উঠেই একজন বলতে শুরু করে আমরা হিজড়া, আপনারা আমাদের সাহায্য করেন। এরপর এক যাত্রীর কাছে গিয়ে বলে- ‘এই ভাই ১০ টেহা দে।’ ওই যাত্রী অনীহা প্রকাশ করতেই তার গায়ে হাত দিয়ে কর্কশ কণ্ঠে ওই হিজড়া বলতে শুরু করলে ‘এই ভাই এমন করিস কেন? শুক্রবারে ছুটির দিনে তো ঠিকই প্রেমিকাকে নিয়ে পার্কে কিংবা বাসায় গিয়ে হাজার টেহা নষ্ট করবি। আর আমাই ১০ টেহা দেওয়ার মুরদ নেই তোর। তুই কেমন পুরুষ হে?’ এরই মধ্যে আরেকজন বলল, ‘এই তোর পাশের সিটের মেয়েটা কে-রে? তোর বোন না বউ? ও তো হেব্বি সুন্দরী। ও তো দেখছি লজ্জা পাচ্ছে। তোর কোনো লজ্জা নেই? তোরা পারিস বটে?’ দুই হিজড়া ওই যাত্রীকে এভাবেই হেনস্তা করছিল। আর তার পাশে বসা ওই নারীর দুচোখে জল টলমল করছিল। তিনি অনেকটা ভয়ে কুঁকড়ে ছিলেন। এভাবেই ওই যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা আদায় করে হিজড়ারা।
এরপর অন্য যাত্রীদের কাছে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্য যাত্রীরা আপসে ৫-১০ টাকা করে দিয়ে দেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ফুলবাড়িয়া থেকে আবদুল্লাহপুরগামী ৩নং সিটিং সার্ভিসে ওঠে তিন হিজড়া। এরপর তারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। যাত্রীদের মধ্যে একজন টাকা দিতে না চাইলে এক হিজড়া বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে তার কোলে বসে পড়ে। পরে বাধ্য হয়ে ওই যাত্রী টাকা দিয়ে পরিত্রাণ পান। এভাবেই রাজধানীর প্রত্যেক রুটের পাবলিক পরিবহনে চলছে হিজড়াদের উৎপাত-অত্যাচার। মিরপুর ১, ২, ১০; আসাদগেট, ফার্মগেট, আগারগাঁও, বাংলামোটর, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে হিজড়াদের নিয়মিত চাঁদাবাজি চলছে। রাজধানীতে অন্তত ১৫ হাজার হিজড়া (সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী) বসবাস করে। তাদের গুরুর সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। এসব গুরুই শিষ্যদের দিয়ে বাসে বাসে চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কাজ করাচ্ছে। এলাকা ভাগ করে শিষ্যরা। তারা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। এসব গ্রুপের নেতৃত্বে থাকাদের মধ্যে রাহেলা, স্বপ্না, সুইটি, কচি, নাজমা, কল্পনার বাড়ি রয়েছে। রাহেলা হিজড়ার দক্ষিণখানে একটি পাঁচ তলা বাড়ি আছে। কচির আছে দুটি বাড়ি। সুইটির আদাবরে রয়েছে একটি বাড়ি। নাজমার রয়েছে ৩টি বাড়ি ও একাধিক প্লট। ধলপুর এলাকার আবুল হিজড়ার দুটি বাড়ি আছে। গোলাপবাগ এলাকার ১৩/বি/১ নম্বর পাঁচ তলা ও ধলপুর লিচুবাগানে একটি চার তলা ভবনের মালিক তিনি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ছোটখাটো অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলেও কেউ ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয় না।

No comments

Powered by Blogger.