গুলশানে তল্লাশির বিষয়টি জানতেন না প্রধানমন্ত্রীও

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির বিষয়টি জানতেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সোমবার আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ বিষয়টি উঠলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এ তথ্য। তারা আরও জানান, পুলিশি তল্লাশির ঘটনাটি স্যাবোটাজ কিনা, তা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের মতে, এ ঘটনায় রাজনৈতিকভাবে সাধারণ জনগণের ‘সিমপ্যাথি’ (সহানুভূতি) পাচ্ছে বিএনপি। সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছি, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে জানান ‘আমি জানতাম না বিষয়টি।’ দলের সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক সূত্র জানান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বৈঠকে বলেন, যেদিন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়, সেদিন আমাদের বর্ধিত সভা ছিল। যেদিন আওয়ামী লীগের এত বড় একটি অনুষ্ঠান, সেদিনই কেন বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হবে। আর সরকার বা পুলিশ এ তল্লাশির মাধ্যমে কি অর্জন করল। বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ সম্পাদকই তার বক্তব্য সমর্থন করেন। এছাড়া বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, মুক্তচিন্তার অধিকারী, অসাম্প্রদায়িক এবং শিক্ষিত আলেম-ওলামাদের নিয়ে একটি ধর্মীয় সংগঠন গড়ার পক্ষে মত দেন সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্য।
এটি হবে সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদার একটি সংগঠন। আওয়ামী ওলামা লীগ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন এতদিন আওয়ামী লীগের সমর্থিত বলে দাবি করে আসছিল। কিন্তু বেশ আগেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, ওই সংগঠনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বৈঠক সূত্র জানায়, দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইসলামিক সংগঠন গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, আওয়ামীপন্থী আলেম-ওলামারা দীর্ঘদিন থেকে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক প্লাটফর্ম নেই। নিজেদের মধ্যে কোন্দল এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ওলামা লীগের কার্যক্রম সার্কুলার জারি করে বন্ধ করা হয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামীপন্থী সব ইসলামিক শক্তিগুলো নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলা দরকার, যেটা দলের সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মতো কাজ করবে। দলের সাধারণ সম্পাদকও তার কথায় সায় দেন। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয় ধর্ম সম্পাদককে। এ বিষয়ে শেখ আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে ইসলামী সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এদিকে তৃণমূল নেতাদের বিরোধ মীমাংসার জন্য তাদের ঢাকায় ডেকে সালিশ করার সমালোচনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় এনে বিচার করার ফল ভালো হচ্ছে না। এতে এক গ্রুপ খুশি হচ্ছে, আরেক গ্রুপ বেজার হচ্ছে।
তৃণমূলে আরও বিরোধ বাড়ছে। বরং এর চেয়ে তৃণমূলে গিয়ে এসবের সমাধান করা ভালো, সুফল দেবে। আর এখন যেহেতু দলের গঠনতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ হয়েছে, তাই সে অনুযায়ী কোন্দলপূর্ণ এলাকায় গিয়ে কর্মিসভা অথবা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসা যেতে পারে। সোমবারের বৈঠকে মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অসীম কুমার উকিল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র আরও জানায়, হেফাজতে ইসলামর নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বক্তব্যের সমালোচনা করেন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। এ শক্তি বরাবরই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছে। এবারই সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে। আর সেটা নিয়ে সমালোচনা করেন সরকারেরই দুই মন্ত্রী। তখন মাহবুবউল আলম হানিফ সভায় বলেন, আমাদের দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় নেই। সরকারের কিছু মন্ত্রীর উল্টাপাল্টা বক্তব্যের রেশ টানতে হয় দলের নেতাদের। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কখনোই হেফাজত নেতা আল্লামা শফীর সঙ্গে বৈঠক করেননি। তিনি বৈঠক করেছেন দেশের ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে। সেখানে কওমি মাদ্রাসার নেতা হিসেবে শফী যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের কিছু মন্ত্রী এমনভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন, যাতে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শফীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই সময় উপস্থিত নেতাদের অনেকেই হানিফের বক্তব্যে সমর্থন জানান। এছাড়া বৈঠকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে হলে কেন্দ্রের অনুমতি নেয়ার বিষয়টির অবতারণা করেন হানিফ। তাকে সমর্থন দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। এছাড়া বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের স্থানীয় রাজনীতিতে না জড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন করার ইচ্ছা থেকে এলাকার রাজনীতিতে মাথা ঘামানো বা খবরদারি করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এদিকে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি।
সদস্য নবায়নের সূচনাও করেছি। নবায়নের পর নতুন সদস্য অভিযান শুরু হবে। অন্য কোনো দল থেকে কেউ কোনো ইউনিট আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাইলে অবশ্যই কেন্দ্রের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোথাও অন্য দল থেকে কাউকে আওয়ামী লীগে নেয়া যাবে না। দলের সবাইকে নৌকার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, এখন কেউ যেন কোথাও কোনো বিভ্রান্তি করতে না পারে। কেউ যেন প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে। অহেতুক ভালো প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থিতা ঘোষণা করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে যেন বিভেদ না হয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া আসন্ন রমজানে সেহেরি, তারাবি ও ইফতারের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দলের পক্ষে অনুরোধ করেন তিনি। একই সঙ্গে রজমানে যাতে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেজন্যও আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, সোমবার দেখলাম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া টুইট করেছেন। সেখানে তিনি অপরাজনীতি বিদায় করতে চান। আমি বলব, দেশে অপরাজনীতি শুরু করেছেন আপনারা। বাংলাদেশে যত অপরাজনীতি হয়েছে সব বিএনপিই করেছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, অপরাজনীতি নিয়ে আপনার (খালেদা জিয়া) কণ্ঠে বড় বড় সুন্দর কথা মানায় কি? এদিকে সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে যারা প্রথমবার ভোটার হয়েছেন এমন তরুণ এবং নারীদের টার্গেট করার জন্য নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি আবারও মে মাসের মধ্যে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার জন্য নগর নেতাদের তাগাদা দেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপসহ নগর নেতারা বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.