বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণে বাধা আ.লীগ কার্যালয়

নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ১৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়টি এবার পাকা করা হচ্ছে। এদিকে তিন দফা সময় বাড়ানোর পর কেন্দ্রটি চালুর শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ মার্চ। নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরের পাশে এই বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির নাম ‘বিন্দুর মোড় ৩৩/১১ কেভি জিআইএস (গ্যাস ইনসুলেটেড সাবস্টেশন)’। এই বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র থেকে ১৪টি ফিডার লাইনের মাধ্যমে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। রাজশাহীর পবার কাটাখালী থেকে একটি ৩৩ কেভি উৎস লাইন এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এ ছাড়া নগরের শালবাগান এলাকার সঙ্গে একটি রিং লাইন যুক্ত থাকবে। কোনো কারণে ওই এলাকার লাইন ‘ফল’ করলে এই বিতরণ কেন্দ্র থেকে তারা সরাসরি বিদ্যুৎ নিতে পারবে। এটি হবে কেপিআই-১ (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন)-এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নগরে চারটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে। লাইনের দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে ঠিকমতো ভোল্টেজ পাওয়া যায় না।
এই বিতরণ কেন্দ্র চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না। তা ছাড়া ছোট ছোট অনেক ফিডার লাইন হবে। তখন লোড নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ছয় তলাবিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। তার ভেতরে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ করা হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন এই বিতরণ কেন্দ্রের বাথরুম, টেকনিক্যাল স্টাফদের টুলস রুম ও একটি অভিযোগ কেন্দ্র তৈরির কাজ বাকি। যে জায়গায় এগুলো নির্মাণ করার জন্য নকশা ছিল, সেখানেই রয়েছে আওয়ামী লীগের একটি দলীয় কার্যালয়। তারা জায়গা ছেড়ে না দেওয়ার কারণে পুরো প্রকল্পটিই আটকে আছে। এনার্জি প্যাক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। অবস্থা বিবেচনা করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প এলাকায় তাঁদের ১৭-১৮ কাঠা জমি ছিল। পাশে রাস্তা হওয়ায় ছয়-সাত কাঠা জমি ওই রাস্তায় চলে গেছে। বাকিটা রয়েছে। আধা শতাংশের ওপর এই দলীয় কার্যালয় করা হয়েছে। এর আগে দলীয় কার্যালয়টি চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে ঘেরা এবং ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া ছিল। এই কার্যালয়ে কোনো সাইনবোর্ড নেই। ভেতরে একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার ছিল। সামনে একটি ব্যানার ঝোলানো ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মহানগর আঞ্চলিক অফিস, গৌরহাঙ্গা, রাজশাহী।’ গতকাল সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চাটাই খুলে ইটের দেয়াল তোলা হচ্ছে।
কার্যালয়ের উত্তর-পূর্ব পাশে বুকসমান উঁচু করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ইট ও বালু এনে ফেলা হয়েছে। নির্মাণশ্রমিক ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে। দলীয় ব্যানারটা এখনো এক পাশে ঝোলানো রয়েছে। গত বছরের ৫ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘বাধা দলীয় কার্যালয়: আটকে গেছে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে সময় কার্যালয়ের ভেতরে বসে থাকা যুবকেরা বলেছিলেন, এটি একটি অর্পিত সম্পত্তি। এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। কাগজপত্র দেখতে চাইলে তাঁরা দেখাতে পারবেন। তাঁরা এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খান ওরফে সেন্টুর সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। দেলোয়ার হোসেন খান বলেছিলেন, কার্যালয়টি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটন (এ এইচ এম খায়রুজ্জামান) ভাই করে দিয়েছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, সরকারি জায়গা হলে অবশ্যই তাদের ছেড়ে দিতে হবে। তিনি দেলোয়ারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। এবার (গতকাল সোমবার) তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দেলোয়ার বাজে কথা বলেছে। আমি আজকেই তাকে ডেকে নিষেধ করে দিব। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া যাবে না।’

No comments

Powered by Blogger.