‘আমার পরানিকে ওরা কেড়ে নিল’

‘পরিবারের সবার ছোট বলে অনেক আদরের ছিল। সবাই তাকে ডাকত পরানি। স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। আমার পরানিকে ওরা কেড়ে নিল। আমার মেয়ের কী অপরাধ ছিল?’  খাগড়াছড়িতে খুন হওয়া কলেজছাত্রী ইতি চাকমার (১৭) মা ভদ্রপতি চাকমা বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শান্তিনগর আরামবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। তার বাড়ি দীঘিনালার ছনখোলাপাড়া গ্রামে। ১ মার্চ দীঘিনালা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ছনখোলা পাড়া গ্রামে ইতি চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের ছোটবেলার ছবি নিয়ে একটি কক্ষের খাটে বসে আছেন তার মা। কিছুক্ষণ পরপর ছবিতে হাত বুলিয়ে আদর করছেন মেয়েকে। পাশে বসা ইতির নানি শান্তিপ্রভা চাকমার চোখেও জল। প্রতিবেশীরা তঁাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতির মা ভদ্রপতি চাকমা সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের পাড়া কর্মী (প্রাক্–প্রাথমিকের শিক্ষিকা)। মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে মায়ের অনেক আশা ছিল তাকে নিয়ে। পড়াশোনায় ভালো করার জন্য খাগড়াছড়ি সদরের আরামবাগ এলাকায় বোন জোনাকী চাকমার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত।
ভদ্রপতি চাকমা বলেন, তিন ভাইবোনের মধ্যে ইতি সবার ছোট। ছোটবেলা থেকে সে মেধাবী ছিল। জেএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি পায়। সে সব সময় হাসিখুশি থাকত। কখনো বকাঝকা করলে রাগ করেও বেশিক্ষণ থাকতে পারত না। এইটুকু বলেই গলা ধরে আসে ভদ্রপতি চাকমার। চোখ বেয়ে নেমে আসে জল। কয়েক ফেঁাটা পড়ে ইতির ছবি ওপর। ওড়না দিয়ে সেই পানি দ্রুত মুছে দিচ্ছেন তিনি। মিনিটখানেক চুপ থাকার পর আবার কথা বলা শুরু করেন। বললেন, ‘আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফঁাসি চাই।’ ইতির সঙ্গে তার মায়ের সর্বশেষ মুঠোফোনে কথা হয়েছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। ১৫ মার্চ ছিল তার বাবার (অন্তেন্দ্রিয় চাকমা) দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাসায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল। সে আগেই এসেছে, তবে লাশ হয়ে। ইতির ভাবি সুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘সে ১৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে খাগড়াছড়ি গেছে। বলেছিল এবার বিজু উৎসবে খুব আনন্দ করবে। তার যা যা পছন্দ সব রান্না করে দিতে হবে। তার অনেক বন্ধুবান্ধব আসবে। সবাই মিলে মজা করবে। এখন আমি কার জন্য রান্না করব?’ ইতির পাড়া–প্রতিবেশীরাও মেনে নিতে পারছেন না তার মৃত্যু। তঁারাও হত্যাকারীদের ফঁাসি চান। জানতে চাইলে ইতি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় ইতি চাকমার বড় বোন জোনাকী চাকমা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আমরা গণতোষ চাকমা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা তদন্তের স্বার্থে এখন বলতে চাচ্ছি না।’

No comments

Powered by Blogger.