নতুন বই পেলে খুশি পাঠকেরা

উত্তর মুগদাপাড়ার সুরবিতান আদর্শ পাঠাগার।
মঙ্গলবার সকালের দৃশ্য। আবদুস সালাম
‘আমার পাঠাগারটি ছোট। এটি নিয়ে না হয় পরে লিখবেন।’ টেলিফোনের অপর প্রান্তে যিনি ছিলেন, তাঁর নাম রুবিনা ইয়াসমিন। তাঁকে বলা হলো, ‘পাঠাগার ছোট কি বড় সেটা বড় কথা নয়, পাঠাগার সক্রিয় আছে কি না, মানুষের উৎসাহ আছে কি না, সেটাই আসল।’ রুবিনা বললেন, সেদিক থেকে হয়তো কমতি নেই। ২৯ নভেম্বর সকালবেলা। মুগদাপাড়া যেতে মূল সড়ক থেকে ভেতরে ঢুকে আরও একটু গলির ভেতর গেলেই দেখা মেলে সুরবিতান আদর্শ পাঠাগারের। বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা—৮৮, উত্তর মুগদাপাড়া। পাঠাগারটি ছোট বটে, তবে বই দিয়ে সাজানো। চারটি আলমারি।
বসার জন্য আছে চারটি বেঞ্চ। মাঝে একটু জায়গা, সেখানে বসেও পড়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রীর আসার খবর পেয়ে একে একে হাজির হন নিয়মিত পাঠক শ্রাবণ খান, সুরাইয়া এলিনা, সুরাইয়া আক্তার, এলিজা আক্তার, শিরিনা আক্তার, মোহনা বিনতে, আবদুল মতিন, শোয়েব ও নওরীন। ছিলেন পাঠাগারের সভাপতি এ কে এম মোরতেজুর রহমানও। তাঁরা বললেন পাঠাগার নিয়ে তাঁদের স্বপ্নের কথা। তাঁদের কথায় অনুরণিত হলো, পরিসরটা আরেকটু বড় হলে ভালো হতো। ভালো হতো বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে পারলেও। সিটি কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মোহনা বিনতের কথায়, ‘তাহলে পাঠক হিসেবেও আমরা বেশি সম্মানিত বোধ করতাম।’ সবার কথার মধ্যেই খলবলিয়ে ওঠেন এলিজা আক্তার, ‘ম্যাম নতুন বই নিয়ে আসেন, আর আমরা পড়ে শেষ করে ফেলি। আরও নতুন বই আনতে বলি।’ তিতুমীর কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী বোঝেন টানাটানির সংসারের সমস্যাটাও,
‘কিন্তু ম্যাম এত নতুন বই পাবেন কোথায়?’ এলিজার কথার সূত্র ধরে রুবিনা ইয়াসমিন, যিনি এই পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা, বললেন, ‘এই কক্ষটির ভাড়া ছয় হাজার টাকা। স্থানীয় মানুষের অনেক অর্থ থাকতে পারে, কিন্তু পাঠাগারে দেওয়ার মতো মন নেই। কষ্ট করে আমরা পাঠাগারটি চালাই।’ পাবনার মেয়ে রুবিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই গান করতেন। বই পড়ার অভ্যাসটা পরিবারেই ছিল। লেখাপড়া শেষ করে চিন্তা করলেন, একটা পাঠাগার যদি করা যায়, তবে মুগদাবাসীর কাজে লাগতে পারে। ২০০৫ সালে পাঠাগারটি জাতীয় গণগ্রন্থাগারে নিবন্ধিত হয়। প্রতিবছর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে অনুদান পাওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তা মিলেছে মোটে তিনবার। নগদ টাকা ১০ হাজার ও বই ১০ হাজার টাকার। রুবিনার কথায়, 
যে বইগুলো দেওয়া হয় সেগুলো নিশ্চয় ভালো, কিন্তু তরুণ পাঠকেরা ধরতে চায় না। এ জন্য প্রতিবছর একুশে বইমেলার সময় আমরা দুই/তিন হাজার টাকার বই কিনি।’ এখানকার পাঠকেরা বুদ্ধদেব গুহ, হ‌ুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হকের বই বেশি পড়ে। সুরবিতানে বইয়ের সংখ্যা আট শর মতো। গল্প, কবিতা, উপন্যাসের পাশাপাশি রয়েছে জীবনী, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, রূপকথা ও মুক্তিযুদ্ধের বই। পাঠাগারের সদস্যদের মধ্যে নারী বেশি, যাদের বেশির ভাগ কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পাঠকদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ২৫ জনের মতো হবে। দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চালু থাকে পাঠাগারটি। বন্ধ থাকে শুক্রবার।

No comments

Powered by Blogger.