তাঁর আগমন, তাই...

রেলওয়ের মহাপরিচালকের আগমন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার
রাতে ফুলফোটা গাছ এনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে
লাগানো হয়। ছবি: প্রথম আলো
এ যেন আলাদিনের চেরাগের ছোঁয়া। রাজশাহী রেলস্টেশনের চেহারা রাতারাতি বদলে গেল। এক রাতের মধ্যেই ফুলে ফুলে ভরে গেল স্টেশন এলাকা। মরিচা পড়া গ্রিলগুলো পেল নতুন রং। সকালে রোদ উঠতেই ঝাঁ-চকচকে স্টেশন। অনেকেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এত সব শুধু একজনের জন্য। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেন। গতকাল শুক্রবার ভোর রাতে তিনি ট্রেনে করে রাজশাহী রেলস্টেশনে এসে পৌঁছান।
ডিজির আগমন উপলক্ষে স্টেশনের পার্কিং জোনে রাতের মধ্যে ফুল ফোটা বড় বড় গাছ এনে লাগানো হয়েছে। সারা রাত ধরে সেগুলোতে পানি দেওয়া হয়েছে। রাতেই নতুন গ্রিল এনে সেগুলো ঘিরে দেওয়া হয়েছে। আর পুরোনোগ্রিলগুলোতে করা হয়েছে রং। স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং জোনে ফুল গাছ লাগানোর জায়গাগুলো এত দিন খালিই পড়ে ছিল। প্ল্যাটফর্মের ভেতরে যেখানে ট্রেন এসে দাঁড়ায়, তার শেষ মাথায় খানিকটা জায়গা ঘিরে রাখা ছিল, সেখানেও ছিল না কোনো ফুল গাছ। গ্রিলে ছিল না রং। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই সেসব জায়গা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। গ্রিলেও লেগেছে নতুন রং। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের একটি সূত্র জানিয়েছে, মহাপরিচালকের আগমন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নার্সারির ফুল ফোটা বড় বড় গাছ এনে এসব জায়গায় রোপণের কাজ শুরু হয়। কোনো কোনো জায়গায় গাছ লাগানোর মতো মাটি ছিল না। কিন্তু সেখানেও বালু ঢেলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে ফুল গাছ লাগানো হয়। এগুলো বেড়া দেওয়ার জন্য রাতেই গ্রিল এনে স্টেশনেই ঝালাই করে লাগানো হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে রাতে স্টেশনে কর্মচারীদের দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মতো। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে অবস্থান করে দেখা গেছে, গাছ লাগানো ও গ্রিল ঝালাই করে বেড়া দেওয়ার কাজ তখনো শেষ হয়নি। ভোর পাঁচটার দিকে মহাপরিচালক ঢাকাথেকে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে রাজশাহী স্টেশনে এসে নামেন। সেখান থেকে সকালে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যান। সেখানে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে আমনুরা রেলওয়ের উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেন তিনি। রাতে রাজশাহীতে মহাব্যবস্থাপকের সম্মেলনকক্ষে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে। আজ শনিবার সকালে পাকশি ডিভিশনের উদ্দেশে তিনি রাজশাহী ত্যাগ করবেন। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, রাতে সব জায়গায় ফুল গাছ লাগিয়ে স্টেশনের কর্মচারীরা শেষ করতে পারেননি। তবে গ্রিল লাগিয়ে তাতে রং করার কাজ শেষ করেছেন। রাতে লাগানো বড় গাছগুলো রোদ পড়ায় নেতিয়ে পড়েছে। একজন কর্মচারী সেগুলো পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বালুর ওপরে এত বড় বড় গাছ লাগালে কি বাঁচবে? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো কথা বলেননি। আরেক কর্মচারী বলেন, এর আগে মন্ত্রী (রেলমন্ত্রী) এসেছিলেন। তখনো এ রকম করা হয়নি। প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ পাশে একটি ফুলের বাগান রয়েছে। ওই বাগানের গাছগুলো সব ন্যাড়া হয়ে রয়েছে। কোনোটা মরে গেছে। কোনো পরিচর্যা না থাকায় পাতাবাহারের গাছগুলোর মাথায় জড়িয়ে রয়েছে স্বর্ণলতা। কোনো রকমে বাগানের জঙ্গল কেটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাগানের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ছাই স্তূপ হয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে রাজশাহী স্টেশন হয়ে ধূমকেতু ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন রাজশাহী নগরের অনন্যা শিশু শিক্ষালয়ের পরিচালক মাসুদ রানা। তিনি হঠাৎ রাতে স্টেশনের এই কর্মযজ্ঞ দেখে বলেন, রাত-দিন সরকারি কর্মচারীরা এভাবে কাজ করলে তো দেশটা বদলাতে সময় লাগবে না। এভাবে রাতের মধ্যে স্টেশন ফুল দিয়ে ভরার ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কাজ তো রাতেও করতে হয়। এর আগে তো রাতে এভাবে কাজ করতে দেখা যায়নি, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজ থাকলে তো করতেই হয়। আপনারা তো চান স্টেশনটা সুন্দরভাবে সাজানো থাক?’ মহাপরিচালকের আগমনই কি জরুরি কাজ, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তাহলে আগে কেন এই কাজ করা হলো না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মহাপরিচালকের আসার তারিখটা হঠাৎ পরিবর্তন হয়েছে। তিনি জরুরিভাবে এসেছেন। সে জন্য তড়িঘড়ি করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.