খারাপ খেলছি কই

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসানকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন সাংবাদিকেরা। বড় কিছু না ঘটলে বিপিএলের ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন বেশির ভাগ সময়ই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কিন্তু কাল মিরপুরে ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়কের সামনে কত যে প্রশ্ন! সাকিবও যেন প্রস্তুত ছিলেন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে। বিপিএলের প্রথম দুই আসরের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট সাকিব এবার ম্যান অব দ্য ম্যাচই প্রথম হলেন কাল দলের অষ্টম ম্যাচে। আগের সাত ম্যাচে সব মিলিয়ে রান করেছেন ৯৪, সর্বোচ্চ ইনিংস ২৪ রানের। বল হাতে উইকেট মাত্র পাঁচটি। আইপিএল, বিগ ব্যাশ, ফ্রেন্ডস লাইফ টি-টোয়েন্টি—কী খেলেননি!
তবু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের বিপিএলে এমন নিষ্প্রভ থাকাটা মেনে নেওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার বাষ্পটা বেশি ছড়ানোর আগেই সাকিব দিলেন ফিরে আসার বার্তা। কাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে করলেন ২৬ বলে অপরাজিত ৪১ রান, সঙ্গে ১ উইকেট। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের স্বস্তিটা স্পষ্ট, ‘একটু অবদান রাখতে পারলে তো ভালোই লাগে। অত বেশি ব্যাটিং করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না, আজকে (গতকাল) সেই সুযোগটি ছিল। এর আগে এক-দুই ম্যাচে সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারিনি।’ সঙ্গে একটু রসিকতাও জুড়ে দিলেন, ‘এবার তো গাড়ি-টাড়ি দেখছি না। গাড়ি না থাকলে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়ে লাভ কী!’
বিপিএলে এবার একেবারেই কিছু করতে পারছেন না, এমন ঢালাও সমালোচনা মানতে রাজি নন সাকিব। টি-টোয়েন্টির বাস্তবতা তুলে ধরে বললেন, ‘আমি কয়টা ম্যাচে ব্যাটিং করেছি, কয়টা ম্যাচে খেলার সুযোগ ছিল...এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।  আর উইকেট পাওয়া না-পাওয়া পুরোই ভাগ্যের ব্যাপার। আমার মনে হয়, রাজশাহীর সঙ্গে আগের ম্যাচটা বাদ দিলে আমি ভালো বোলিং করেছি।’ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সময়ের দাবি মিটিয়ে খেলাটাই আগে সাকিবের কাছে। তা ছাড়া এবারের বিপিএলে তাঁর লক্ষ্যের মধ্যে ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলীয় অর্জনই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, ‘একেক সময় একেক রকম লক্ষ্য থাকে। এ বছর একটাই লক্ষ্য—ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া। আমি অবদান রাখি না-রাখি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো দলের পারফরম্যান্স।’ কিন্তু ঢাকার ফাইনালে উঠতে যে অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে অলরাউন্ডার সাকিবকেও জ্বলে উঠতে হবে! কালকের পারফরম্যান্সের পর সাকিব যেন সেটারও বিশ্বাস পাচ্ছেন, ‘আজ (গতকাল) যেমন একটু দরকার ছিল, সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে। যখন কিছু করার সময় আসবে, তখন তা করতে পারাই গুরুত্বপূর্ণ।’ আগের তিন আসরের সঙ্গে তুলনা করে সাকিবের কাছে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে হচ্ছে এবারের বিপিএল।
এ ছাড়া মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালদের সঙ্গে তিনিও একমত, এবারের আসরের বড় প্রাপ্তি স্থানীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, ‘সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ও সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক সবই তো স্থানীয়। এটা খুব ভালো লক্ষণ। এই কারণেই এবারের টুর্নামেন্ট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে।’ মেহেদি মারুফ, মোহাম্মদ শহীদ, মোসাদ্দেক হোসেনের মতো এ রকম খেলোয়াড় সাকিবের দলেই আছেন কয়েকজন। মোসাদ্দেককে নিয়ে বেশ আশাবাদী ঢাকার অধিনায়ক, ‘ওর মধ্যে বড় খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভালো একজন ফিনিশার হতে পারে। দেখতে ওকে অত বিগ হিটার মনে না হলেও বড় শট খেলতে পারে সে। আমাদের দেশের অনেক ব্যাটসম্যানই এটা পারে না।’ মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলা অন্য রকম অভিজ্ঞতাও দিচ্ছে সাকিবকে। বিপিএলে শ্রীলঙ্কার এই দুই সাবেক অধিনায়কেরও যে অধিনায়ক তিনি! তবে দলে এ রকম বড় ক্রিকেটার থাকার দুই রকম দিকই দেখছেন তিনি, ‘স্বাভাবিকভাবেই যখন সবাই পরামর্শ দিতে থাকে, তখন দ্বন্দ্বে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যখন কী করা উচিত বুঝে ওঠা যায় না, তখন তাদের দিক থেকে ভালো পরামর্শ আসতে থাকে।’

No comments

Powered by Blogger.