আয়কর বিবরণী জমার সময় আর চার দিন

ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আছে আর মাত্র চার দিন। অন্য বছর এমন শেষ সময়ে রিটার্ন জমার জন্য করদাতাদের মধ্যে যেমন তোড়জোড় থাকে; তেমনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর দাবি ওঠে। কিন্তু এবার আর সেই পরিস্থিতি নেই। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব করদাতাকে রিটার্ন জমা দিতে হবে। সময় বাড়বে না—এ ঘোষণা বাজেটেই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। করদাতাদের মধ্যে যাঁরা এখনো রিটার্ন দেননি, তাঁরা এখন ব্যস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যাঁরা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না, তাঁদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে। নির্ধারিত করের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এমনকি যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে কোনো করদাতা যদি সময় বাড়িয়ে নেন, তবু এ বিলম্ব সুদ দিতেই হবে। যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে আবেদন করলে উপ কর কমিশনার দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিতে পারেন। এত দিন প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর রিটার্ন জমার সময় শেষ হতো। প্রতিবার ব্যবসায়ীদের দাবিতে সময় একাধিক দফা বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু চলতি অর্থবছরে ৩০ নভেম্বর সময় বেঁধে দিয়ে অর্থবিল পাস করা হয়েছে।
মানে, সময়সীমা এখন আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে এসেছে। এবার ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর সপ্তাহ পালন করছে এনবিআর। এ সময়ে আয়কর মেলায় যেসব সুবিধা পান করদাতারা, তাঁরা মাঠপর্যায়ে কর কার্যালয়ে একই সুবিধা পাবেন। প্রতিটি কার্যালয়ে সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। আর করদাতাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। কী পরিমাণ রিটার্ন জমা পড়েছে—এর তথ্য হালনাগাদ করেনি এনবিআর। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। এর ফলে এ বছর চাকরিজীবীদের মধ্যে রিটার্ন জমার সংখ্যা ৪ লাখ বাড়বে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। গতবার প্রায় ১২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন। গতবারের মতো এ বছরও আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হলে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে আড়াই লাখ টাকার কম আয় হলেও কয়েক শ্রেণির করদাতাদের অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হবে। গাড়ির মালিক ও অভিজাত ক্লাবের সদস্য হলেও বাধ্যতামূলক রিটার্ন দিতেই হবে। এ ছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, হিসাববিদদের মতো পেশাজীবীদের করযোগ্য আয় না থাকলেও এনবিআরকে আয়-ব্যয় বিবরণী জানাতে হবে। সব মিলিয়ে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি, সরকারি চাকরিজীবীসহ ২০ ধরনের করদাতাদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।
চেক লিস্ট: শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না। প্রয়োজন অনুযায়ী বেশ কিছু কাগজপত্র আয়কর বিবরণীর দলিলের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সেগুলোর অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট। কোনো করদাতা যদি কর রেয়াত নিতে চান, তবে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়ার রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠীবিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ। শাস্তি: ৩০ নভেম্বরের পর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিলে নির্ধারিত করের ওপর সুদ দিতে হবে—চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে ৭৩এ নামে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে কোনো করদাতা বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে ওই ব্যক্তির করের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ দিতে হবে। তবে সুদ নির্ধারণ হবে সারা বছরে ওই করদাতা যে উৎসে কর ও অগ্রিম কর দিয়েছেন, তা বাদ দিয়ে আয়করের ওপর।

No comments

Powered by Blogger.