ট্রাম্পের সম্পদ কত?

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, বিশ্বজুড়ে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মোট মূল্যমান ১০ বিলিয়ন ডলার হবে। কিন্তু এই পরিমাণ সঠিক কি না, সেটা জানার একমাত্র উপায় ট্রাম্পের সর্বশেষ আয়কর হিসাব। সাম্প্রতিক সময়ে সব প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তাঁদের আয়করের হিসাব নির্বাচনের আগেই দিয়েছেন, কিন্তু ট্রাম্প তাতে গররাজি। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, তাঁর আয়করের হিসাব এখন রাজস্ব বিভাগ ‘অডিট’ করছে। এই নিরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেই হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন না। ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের নতুন ব্যবস্থাপক কেলিঅ্যান কনওয়ে গত রোববার একই কথা বললেন। পাঁচ মাস আগে যখন তিনি সিনেটর টেড ক্রুজের হয়ে কাজ করছিলেন, তখন ট্রাম্পকে তাঁর আয়করের ব্যাপারে ‘স্বচ্ছ’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন নতুন চাকরিতে এসে সুর বদলেছেন কনওয়ে। এবিসি টিভির সঙ্গে আলাপকালে যুক্তি দেখিয়েছেন, অডিট ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই হিসাব প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া সে খবর জেনে সাধারণ মানুষের কী লাভ? তারা জানতে চায় হিলারি বা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তাঁদের আয়করের হার কী দাঁড়াবে।
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় আয়কর হিসাব দিতে ইতস্তত করেছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি। তখন ট্রাম্প পরিহাস করে বলেছিলেন, আয়কর দাখিলে ব্যর্থতার জন্যই ওবামার কাছে হেরে যান রমনি। রাজস্ব বিভাগ বলেছে, অডিট চলাকালে আয়করের হিসাব প্রকাশে কোনো বাধা নেই। হিলারি ক্লিনটন ইতিমধ্যেই তাঁর সর্বশেষ আয়করের হিসাব প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের রানিংমেট মাইক পেন্স পর্যন্ত বলেছেন, তিনি নির্বাচনের আগেই তাঁর আয়করের হিসাব প্রকাশ করবেন। অথচ ট্রাম্প মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন, কিন্তু কেন? এর একটি জবাব মিলেছে, চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস-এর উদ্যোগে এক অনুসন্ধানী সমীক্ষায়। নির্ভরযোগ্য একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে ও উন্মুক্ত বিভিন্ন নথি ব্যবহার করে ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, ট্রাম্পের মোট সম্পদের পরিমাণ সম্ভবত তিনি যতটা দাবি করেছেন, তার চেয়ে অনেক কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর মালিকানাধীন সম্পত্তি যেমন ট্রাম্প টাওয়ার বা ট্রাম্প গলফ কোর্স—কোনো না কোনো বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যুক্ত। এসব বিনিয়োগকারীর অনেকেই চীনের। তা ছাড়া এর প্রায় প্রতিটির মাথায় রয়েছে বড় অঙ্কের ঋণ। আয়করের হিসাব না দিলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে ট্রাম্প একটি দীর্ঘ ঘোষণা (ফিন্যান্সিয়াল ডিসক্লোজার স্টেটমেন্ট) দিয়েছেন। সেখানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে।
এই ঘোষণা অনুযায়ী ট্রাম্পের মোট ঋণের পরিমাণ মাত্র ৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস-এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। যেমন ম্যানহাটনে ট্রাম্পের নাম বহনকারীর একটি ভবন, যার তিনি শুধু আংশিক মালিক, সেখানে তাঁর ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ডলার। ট্রাম্পের সম্পদের প্রকৃত মূল্য নিয়ে অবশ্য নানা জল্পনা-কল্পনাও রয়েছে। ফোর্বস ও ফরচুন সাময়িকী বলছে, এই পরিমাণ বড়জোর ৫০০ কোটি ডলার। ট্রাম্পের জীবনীকার টিমথি ও’ব্রায়ানের হিসাবে অনুসারে, ২০০৫ সালে ট্রাম্পের সম্পত্তির মূল্য ২৫ কোটি ডলারের বেশি ছিল না। ভ্যানিটি ফেয়ার পত্রিকা বিভিন্ন সূত্র অনুসরণ করে তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১০০ কোটি ডলারেরও কম বলে জানিয়েছে। ট্রাম্প ঠিক কী পরিমাণ সম্পদের মালিক, তা জানা জরুরি এই কারণে যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর একমাত্র যোগ্যতা—তিনি সফল ব্যবসায়ী। তা ছাড়া আয়করের হিসাব থেকে বোঝা যাবে, তিনি ঠিক কী হারে আয়কর দিয়ে থাকেন। নিন্দুকেরা বলছেন, ট্রাম্পের মোট সম্পদ তাঁর দাবির চেয়ে অনেক কম। মোটেই তেমন সফল কোনো ব্যবসায়ী তিনি নন, সে কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই নিজের আয়করের হিসাব প্রকাশে এমন আপত্তি করছেন ট্রাম্প। অবশ্য উইকিলিকস জানিয়েছে, ট্রাম্পের আয়করের হিসাব তারা ফাঁস করার তালে আছে।

No comments

Powered by Blogger.