বিশ্বঐতিহ্য ধ্বংসের দায় নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা

আহমেদ আল-ফকিহ আল-মাহদি
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির জঙ্গিনেতা আহমেদ আল-ফকিহ আল-মাহদি দেশটির প্রাচীন শহর টিমবাকটুর ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংসের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গতকাল সোমবার এ ক্ষমা চান তিনি। বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক কোনো স্থাপনা ধ্বংসের দায়ে আইসিসিতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। মাহদি ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আনসার দ্বীনের নেতা। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরিবের সঙ্গে এই সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০১২ সালে জঙ্গিরা টিমবাকটু দখল করে নেয়। সে সময় তারা দ্বাদশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা টিমবাকটু শহরের একটি মসজিদ ও নয়টি সমাধি ধ্বংস করে ফেলে। টিমবাকটু জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা।
মাহদির বিচার শুরুর মাধ্যমে এই প্রথম কোনো ইসলামি জঙ্গিনেতা আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি হলেন। সেই সঙ্গে এই প্রথমবারের মতো সন্দেহভাজন কোনো জঙ্গিনেতা দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। টিমবুকটুর অমূল্য স্থাপনা ধ্বংসের জন্য মাহদি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাই। আমি তাদের কাছে অনুরোধ করি, আমাকে তারা যেন তাদের বিপথে যাওয়া কোনো এক সন্তান হিসেবে দেখেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। আমার জন্য যেসব ধ্বংস হয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত।’ ২০১২ সালের ৩০ জুন থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে টিমবাকটুর ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। বিশ্বজুড়ে এর বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন, এই বিচারের ফলে অপরাধীদের কাছে একটি শক্ত বার্তা যাবে। এরপর আর কেউই ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে পার পাবে না। মাহদি টিমবাকটু শহরের মানুষের কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে একটি প্রতিজ্ঞা করতে চাই। আর তা হলো, এই প্রথম এবং শেষবারের মতো আমি অপরাধ করেছি। এমন অপরাধ আর কখনোই করব না।’ আইসিসি মাহদির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির পর নাইজারের সরকার তাঁকে ধরিয়ে দেয়। ইউনেসকো ১৯৮৮ সালে টিমবাকটুকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। শহরটিতে জঙ্গিদের ধ্বংসযজ্ঞের পর ইউনেসকো বলেছিল, ‘এটি আমাদের জন্য একটি ভয়াবহ খবর।’ বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, তারা মাহদির ৯ থেকে ১১ বছরের কারাদণ্ড চাইবে। মাহদি বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন না। তবে আদালতের বিচারকেরা বলেন, মাহদির অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আহমেদ আল-ফকিহ আল-মাহদি আদালতে ইসলামি জঙ্গিদের ‘শয়তান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের সব মুসলিমকে একটি ছোট উপদেশ দিতে চাই। আমি যে কাজ করেছি, এমন কাজ কেউ করবেন না। কারণ মানবতার জন্য শুভকর নয় এসব কাজ।’

No comments

Powered by Blogger.