টিসিবির পণ্য কেনার হিড়িক

ঢাকায় টিসিবির বিক্রয় স্পটে
ক্রেতাদের দীর্ঘলাইন -যুগান্তর
সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কর্মসূচির শুরুতেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দুর্মূল্যের বাজারে কম দামের পণ্য পেতে মরিয়া খোদ রাজধানীর ক্রেতারাই। বাজার পরিস্থিতি এতটাই চড়েছে যেখানে টিসিবি পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন অনেক সক্ষম ক্রেতাও। উদ্দেশ্য দুটো পয়সা বাঁচানো। সহজেই বলে দেয়া যায়- নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, দিনমজুর কিংবা ভাসমান ক্রেতারা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন কম দামে সরবরাহ করা টিসিবির এ পণ্য কিনতে। সরেজমিন রাজধানীর প্রেস ক্লাব, সচিবালয় গেট, কাপ্তানবাজার, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, শান্তিনগর বাজার, ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার ঘুরে এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। হঠাৎ রোদ, থেমে থেমে বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে বুধবার এসব স্থানে স্বল্পমূল্যের পণ্য নিতে এসেছেন স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্তের নিুআয়ের মানুষও। তবে চাইলেই তো আর স্বল্পমূল্যের পণ্য পাওয়া যায় না। এ জন্য অনেক ঘাম ঝরাতে হয়। দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ লাইনে। একসময় নিজের সিরিয়াল এলেও দেখা গেছে, ডাল আছে, তেল নেই। আবার লম্বা লাইনের সারি শেষ হওয়ার আগেই বিক্রি শেষ হয়ে গেছে টিসিবির দৈনিক সরবরাহকৃত পণ্য। একই খবর পাওয়া গেছে, শাহজাহানপুর, বাসাবো, রামপুরা, আগারগাঁও শেওড়াপাড়া বাজার, মিরপুর-১-এর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,
মোহাম্মদপুর টাউন হল ও ঝিগাতলা কাঁচাবাজারসহ রাজধানীতে টিসিবির কার্যক্রম পরিচালনা করা ৩২টি স্থানেও। জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে সারা দেশে ১৭৪টি ট্রাকের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি করে এবং জেলা শহরে ২টি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে টিসিবির খোলা ট্রাক থেকে পণ্য নিতে আসা জনৈক ভোক্তা কামাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়া যায়। এ জন্য সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সহায় হয়েছে। সিরিয়ালে আমার পালা এলে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ২ কেজি ছোলা, ২ কেজি চিনি ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পেরেছি। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মসুর ডাল কিনতে পারিনি। আমার পালা আসার আগেই তা শেষ হয়ে গেছে। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদসংলগ্ন টিসিবির খোলা ট্রাক থেকে পণ্য নিতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ভাই শুধু আমি নই, আমার মতো অনেকেই লাইনে দাঁড়াইছিল। তারাও মাল পায় নাই। শুনতাছি কালকেও আইবো। তাই কাল আগেভাগেই আইস্যা লাইনে দাঁড়ামু। কারণ এখান থেকে মাল নিলে বাজার থাইক্যা অনেক কম দামে পাওয়া যায়।’ অভিন্ন সুরেই মন্তব্য করলেন, পুরান ঢাকার নিমতলি থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘চিনি ও তেল নিতে এখানে আসছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও এখন পর্যন্ত তা কিনতে পারিনি। শুনছি আজকের স্টকে আর বেশি মাল নাই।
নিতে হইলে কাল আবার আসতে হবে।’ টিসিবি পণ্য বিক্রেতা জিয়া উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, টিসিবি থেকে ৩০০ লিটার সয়াবিন তেল, ২০০ কেজি ডাল, ৮০০ কেজি ছোলা, ৪০০ কেজি চিনি ও ৫০ কেজি খেজুর সরবরাহ করা হয়। তিনি দাবি করেন, এ পরিমাণ পণ্য ভোক্তার চাহিদার তুলনায় খুবই কম। দুই ঘণ্টা থাকলেই বিক্রি শেষ হয়ে যায় এ কারণে অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শান্তিনগরের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ভাই, টিসিবির পণ্যে মনে হচ্ছে আগের তুলনায় মান ভালো হয়েছে। বিশেষ করে তেল ও ডাল খুবই মানসম্মত। আবার দামও কম। তাই সুযোগ পেয়ে স্বল্পমূল্যের সুযোগ নিলাম এখানে এসে। আমার মতো অনেকেই টিসিবি পণ্য কিনে নিচ্ছে।’ টিসিবি চিনি (দেশী) প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, মসুর ডাল ৮৯ দশমিক ৯৫ টাকা, সয়াবিন তেল বোতল (৫ লিটার) প্রতি লিটার ৮০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা ও খেজুর প্রতি কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৯০-১০০ টাকা, চিনি ৫৮-৬২, বড় দানার মসুর ডাল ১০০-১১০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। টিসিবির ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে একজন ক্রেতা ৪ কেজি ছোলা, ৫ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল , ৩ কেজি চিনি ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.