ফালুজার আংশিক দখল নিল ইরাকি বাহিনী

ইরাকের ফালুজায় সরকারি বাহিনীর হামলায় নড়ে গেছে ইসলামিক
স্টেটের খুঁটি। তিনদিক থেকে সাঁজোয়াযান দিয়ে ঘিরে শহরের
অধিকাংশ জায়গাই নিজেদের দখলে নিয়েছে তারা। দূরদর্শণে
জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই সাঁড়াশি হামলা
চালায় সরকারি বাহিনী (বামে)। অভিযানে ইরাকী
বাহিনীর সমর্থনে বরাবরের মতোই পাশে ছিল মার্কিন
নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর সেনারা (ডানে)। এএফপি
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কব্জায় থাকা ফালুজা শহরের কয়েকটি জেলা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ইরাকি বাহিনী। শহরটি পুরোপুরি দখল নিতে অভিযান চলছে বলে জানা গেছে। শহরের ভেতরে অবরুদ্ধ প্রায় ৫০ হাজার বেসামরিক মানুষের জন্য ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সরকারি বাহিনীকে। সোমবার সকাল থেকে শহরটির তিন দিক থেকে হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। শহরটিতে আইএস-ইরাক বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ফালুজার কয়েকটি জেলা ইরাকি বাহিনীর দখলে চলে এসেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দি ইনডিপেনডেন্ট।
আইএস যোদ্ধারা আত্মঘাতী ও গাড়িবোমার সাহায্যে ইরাকি বাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে নাইমিয়া জেলা পুরোপুরি ইরাকি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইরাকি বাহিনী। সোমবার দুপুর নাগাদ নাইমিয়ার পুলিশ স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইরাকি বাহিনীর দখলে আসে। ইরাকি বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেলওয়াহাব আল সাদি বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তায় ইরাকি বাহিনী ফালুজায় প্রবেশ করেছে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফালুজায় প্রায় ৫০ হাজার বেসামরিক মানুষ আটকা পড়েছে। তারা ইরাকি সেনাবাহিনী, শিয়া মিলিশিয়া, বিভিন্ন গোষ্ঠীগত সশস্ত্র বাহিনী এবং আইএসের মধ্যে ক্রসফায়ারে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আবার আইএস তাদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলেও আশংকা করা হচ্ছে। ইরাকি বাহিনী আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরাকি বাহিনী ফালুজা পুনরুদ্ধার করতে পারলে আইএসের দখলে থাকা আরেক শহর মসুলেও তীব্র হামলা চালাতে পারে ইরাকি বাহিনী। এদিকে আইএস সামরিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়ে এখন আত্মঘাতী বোমা হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি করেছে।
ফালুজা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী রামাদিতে এবং বাগদাদের উত্তরে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে আইএস। ফালুজার বিস্ফোরণে অন্তত ১৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। বাগদাদের হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। বাগদাদের শিয়া অধ্যুষিত শাব জেলায় গাড়িবোমা হামলায় ৮ বেসামরিক ও ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। বাগদাদ থেকে ৩১ মাইল দূরবর্তী তারমিয়াহ শহরের বাজারে বোমা হামলায় ৭ বেসামরিক ও ৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আইএসের তৃতীয় মোটরসাইকেল-বোমা বিস্ফোরণ হয় সাদর শহরে। এতে ৩ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে বাগদাদের ৪০ মাইল দূরবর্তী আইএসের দখলে থাকা ফালুজা পুনরুদ্ধারে ইরাকের সেনাবাহিনী সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সেদিনই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে ফালুজার অধিবাসীদের শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে ইরাকি সেনাবাহিনী। আর যারা শহর ছাড়তে পারবেন না, তাদের বাড়ির ওপর সাদা পতাকা লাগিয়ে রাখার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি ইরাকের বিমানবাহিনী ফালুজায় বিমান থেকে লিফলেটও বিতরণ করে। তাতে শহরের বাসিন্দাদের সেনাবাহিনীর তৈরি করা ‘নিরাপদ গলি’ দিয়ে শহরের বাইরে চলে আসার আহ্বান জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.