হেলে পড়া ভবনে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম

ভূমিকম্পে হেলে পড়া চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকার সিদ্দিক
শপিং কমপ্লেক্স (ডানে)। ঝুঁকি উপেক্ষা করে ভবনটির
বেশির ভাগ দোকান গতকাল বিকেলে খোলা ছিল
ভূমিকম্পে হেলে পড়া চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকার বহুতল ভবন সিদ্দিক শপিং কমপ্লেক্সে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলছে। ভবন হেলে পড়ার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তবে এ অবস্থাকে নিরাপদ মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, হেলে পড়া ভবনগুলোতে নিরাপত্তার স্বার্থেই আপাতত অবস্থান করা উচিত হবে না। ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত কি না, এ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত সবার অপেক্ষা করা উচিত। গত বুধবার রাতের ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় একটি, নিউমার্কেট এলাকায় দুটি, এনায়েতবাজারে একটি, হালিশহর আবাসিক এলাকায় একটি, ওয়াসা মোড়ে একটি, ঝাউতলায় একটি, জিইসি মোড়ে একটি ও রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভবন হেলে পড়ে। এই নয়টি ভবনের মধ্যে আবাসিক তিনটি, বাণিজ্যিক পাঁচটি ও একটি ভবনে কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সিদ্দিক শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। ভবনের নিচতলায় জুতার দোকানে কেনাকাটা করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। শো প্যালেসের মালিক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমিকম্পে এই ভবনের কিছুই হয়নি। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা কি এখানে ব্যবসা করতাম?’ হেলে পড়া ভবনে ব্যবসা করতে কোনো আতঙ্ক কাজ করছে কি না—জানতে চাইলে অ্যাডিডাস শুজের মালিক আবদুর রহিম বলেন, ‘না, এই ভবনে কোনো ঝুঁকি নেই।’ স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফ হোসেন বলেন, এই মার্কেট ভবন হেলে পড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। ভূমিকম্পে নগরের এনায়েতবাজার এলাকায় পাঁচতলা ও তিনতলাবিশিষ্ট দুটি ভবন একটি অপরটির সঙ্গে লেগে গেছে। তিনতলা ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি দোকান, দোতলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ও তৃতীয় তলায় বাসাবাড়ি রয়েছে। পাঁচতলা ভবনে ব্যাংক, বিমা কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। তিনতলা ভবনের মালিক মোহাম্মদ জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, আগে থেকেই ভবন দুটি জোড়া লাগানো অবস্থায় আছে। এই ভবনের নিচতলার ব্যবসায়ী আবু সাঈদ মাসুদ ও মো. মোস্তাফিজ বলেন, ‘ঝুঁকি থাকলে তো দোকান খুলতাম না।’ পাঁচতলা ভবনে থাকা একটি বিমা কোম্পানির শাখা ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভূমিকম্পে ভবনগুলো হেলে পড়েছে বলে মনে হয় না।’ তাঁর কার্যালয়ে আসা গ্রাহকদের মধ্যে কোনো ভীতি নেই বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজড কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম প্রথম আলোকে বলেন, চুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল হেলে পড়া ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এরপর সেখানে লোকজন থাকতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজ রোববার সিডিএর সঙ্গে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.