রিজার্ভের অর্থ যায় সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র মেট্রোরেলের নামে

রাজকোষের চুরি হওয়া অর্থ পাঠানো হয়েছিল সরকারি প্রকল্প আর প্রতিষ্ঠানের নামে। লোপাট হওয়া অর্থের যে অংশ শ্রীলঙ্কায় যায় তা পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) নামে। আর ফিলিপাইনে স্থানান্তর করা ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেট্রো রেল। রয়টার্স ও ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শ্রীলঙ্কার সন্দেহভাজন এক ব্যবসায়ীর সরবরাহ করা সুইফট মেসেজিং নথিপত্রের বরাতে গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অর্থ প্রেরক হিসেবে সেখানে ছিল বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ সংস্থার নাম।
হাগোডা গ্যামেজ শালিকা পেরেরা নামের ওই নারী ব্যবসায়ী সুইফট মেসেজিং সিস্টেম থেকে আসা বার্তার একটি অনুলিপি রয়টার্সকে দেখিয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন ডলার ঢোকার ‘রেমিটেন্স অ্যাডভাইসরি’তে লেখা আছে, ২০১০ সালে একটি বৈদ্যুতিক প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাইকার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল বিদ্যুৎ সংস্থা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যান একে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সংস্থার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন বলেন, ‘তারা হয়তো সরকারি সংস্থার নাম ব্যবহার করেছে, একে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে।’
হাগোডার শালিকা ফাউন্ডেশনে অর্থ পাঠানোর বার্তায় হ্যাকাররা ফাউন্ডেশন বানান ভুল করায় রক্ষা পায় রিজার্ভের ২০ মিলিয়ন। তবে, ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) পাঠানো অর্থ উত্তোলন করতে সক্ষম হয় অপরাধীরা। অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক প্রভাবশালী বৃটিশ দৈনিক ফাইনান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইনে পাচার হওয়া অর্থ পাঠানো হয়েছিল সেতু, বিদ্যুত কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রো প্রকল্পসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি অবকাঠামো প্রকল্পের নামে। এসব প্রকল্পের তথাকথিত পেমেন্ট হিসেবে আরসিবিসি ব্যাংকের চার অ্যাকাউন্টে ঢোকে ৮১ মিলিয়ন ডলার। এরপর সে অর্থ ফিলিপাইনের ক্যাসিনো জগতে মিলিয়ে যায়।
এর মধ্য থেকে বৃহস্পতিবার ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত দেয় ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কিম ওং।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে হ্যাকাররা অর্থ লোপাট করতে সক্ষম হয়েছিল তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় বাংক থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার লোপাটের টার্গেট করেছিল সাইবার অপরাধীরা। তারা অর্থ চুরির কাজটি করে ৫ই ফেব্রুয়ারি। এর দুদিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝতে পারে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ডাকাতির শিকার তারা। অপরাধীরা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরপর অনেকগুলো ট্রান্সেকশন সম্পন্ন করার মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এরপর ট্রান্সেকশনগুলো বাতিলের বার্তা পাঠায় নিউ ইর্য়ক ফেড, আরসিবিসি, মার্কিন মধ্যস্থতাকারী ব্যাংক সিটি, ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক মেলন ও ওয়েলস ফার্গো এবং শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশনে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে এই অর্থ লোপাটের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে যেসব ব্যাংক ও বড় করপোরেশনগুলো নিজেদের অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের অর্থ রাখে তাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
৬ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ঠা ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে আসা ট্রান্সফার অর্ডার যাচাইয়ের কয়েক ডজন বার্তা দেখতে পায়। ৩৫টি লেনদেনের মধ্যে ৫টি অনুমোদিত হয়। আনুমানিক ২০ মিলিয়ন যায় শ্রীলঙ্কার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। সৌভাগ্যবশত, লেনদেনের অন্তর্বর্তী একটি ব্যাংক ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুলের বিষয়টি পাল্টা যাচাই করলে রক্ষা পায় ওই অর্থ।
গতকাল রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ চুরি নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন শালিকা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার পেরেরা। তিনি বলেছেন, ২ কোটি ডলার আসার কথা ছিল তার অ্যাকাউন্টে। তিনি বিষয়টা আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু ওই অর্থ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, তা জানা ছিল না তার। নাম আসছে এক জাপানি মধ্যস্থতাকারীরও। রয়টার্সকে তিনি জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও কিছু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ওই অর্থ আসার কথা ছিল। তার দাবি, জাইকার সঙ্গে তার সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু জাপানে যোগাযোগ আছে, এমন একজন পরিচিত লোকের মাধ্যমে তার সঙ্গে জাইকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে পেরেরার বক্তব্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় রয়টার্স। এমনকি তিনি যে পরিচিত লোকের কথা বলেছেন, তার সঙ্গে পেরেরারই দেয়া ফোন ও ই-মেইলে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, জাপানি সরকারি সংস্থা জাইকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, শালিকা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। এমনকি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেও ছিল না। তদন্ত চলতে থাকায় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখা।
পেরেরা, তার স্বামী, শালিকা ফাউন্ডেশনের চার পরিচালক ও পেরেরার পরিচিতদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেখানকার আদালত। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘অবিচার’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। পেরেরার বক্তব্য অনুযায়ী, তার ব্যবসা ধুঁকছে। তার আরও চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। একটি প্রকাশনা সংস্থা, একটি অটো পার্টস কোম্পানি, একটি নির্মাণ কোম্পানি ও একটি পশুখাদ্য প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে তার প্রকাশনা সংস্থায় এত বড় ক্ষতি হয় যে তিনি নিজের কম্পিউটারগুলোও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এখন তিনি ইন্টারনেট ক্যাফে থেকে কিছু ব্যবসা করেন। তার দাবি, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পিজ্জা হাট ও কিছু রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে, পেরেরা ও তার পরিচিত লোকটি তাকে জাইকা থেকে ২ কোটি ডলার পাইয়ে দেয়ার কথা জানান। এ লোকটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পেরেরাকে বিনিয়োগকারী ধরিয়ে দিতে সহায়তা করে আসছেন। তাদের চুক্তি মোতাবেক, ওই অর্থ দুই ভাগ হবে। একটি যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। আরেকটি যাবে বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পে, যেটি নিয়ন্ত্রণ করবেন ওই ব্যক্তি। শ্রীলঙ্কান পুলিশের গত সপ্তাহের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা আছে, পেরেরা আগেভাগেই প্যান এশিয়া ব্যাংকের কলম্বো শাখায় বলে রেখেছিলেন যে, তার কোম্পানি ২ কোটি ডলার পেতে পারে একটি জাপানি তহবিল থেকে। তদন্তের স্বার্থে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছেন প্যান এশিয়া ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
৪ই ফেব্রুয়ারি প্যান এশিয়া ব্যাংক থেকে শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে রেমিটেড হয়। কিন্তু লেনদেনের অঙ্ক অস্বাভাবিক রকম বড় হওয়ায় এ অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দিতে চায়নি ব্যাংক। বরং আরও ব্যাখ্যা চেয়ে বসে ব্যাংকটি। ৯ই ফেব্রুয়ারি, পেরেরাকে প্যান এশিয়া ব্যাংক থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জানিয়ে দিয়েছে ওই অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য।
ওদিকে, ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধীরা এক বছরেরও বেশি সময় থেকে পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিটপ শাখার যে অ্যাকাউন্টগুলোতে অর্থ পাঠানো হয়, তা খোলা হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ লেনদেন হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেনই হয়নি। ইতিমধ্যে জানা গেছে অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয় ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই বিপর্যয়ের সূত্রপাত অর্থ লেনদেনের বাংলাদেশ প্রান্তে যেখানে অজানা সাইবার অপরাধীরা কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়ার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ম্যালওয়ারটি বৈধ লেনদেন হুবহু নকল করে ৩৫টি অর্থ স্থানান্তরের বার্তা পাঠায়। ৩৫টি লেনদেন বার্তার ৩০টি ব্লক করেছিল নিউ ইয়র্ক ফেড। বাকি ৫টি লেনদেন অনুমোদন পায়।
পুরো এই ঘটনায় ভেতরের কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ। হ্যাকাররা এমন কারও কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিল কি না সে সম্ভাবনা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বা নিউ ইয়র্ক ফেড উড়িয়ে দেয়নি। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। তাছাড়া সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে কাজটা দক্ষ অপরাধী হ্যাকারদের দিয়ে দূর থেকে করা সম্ভব সেটা করতে এমন কোনো ব্যক্তির প্রয়োজন নাও লেগে থাকতে পারে।
প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, বাংলাদেশ ও নিউ ইয়র্ক ফেডের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। সেটা হলো স্বয়ংক্রিয় সুইফট বার্তার পর অতিরিক্ত যাচাই করা। এমন পদ্ধতিগুলো অবশ্য ব্যাংক থেকে ব্যাংকে ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশিরা বলছেন, ফেড ১০১ মিলিয় ডলার লেনদেনের বিষয়টি যাচাই করতে বার্তা পাঠিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার তরফে কোনো জবাব না পেয়েই তারা ওই লেনদেন সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা যেহেতেু যাচাই করতে চেয়েছিল, আরেকটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল। আরেকটু ধৈর্য তারা দেখাতো পারতো। তবে নিউ ইয়র্ক ফেড বলছে তারা নিয়ম কানুন অনুসরন করেই লেনদেনগুলো সম্পন্ন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি এশিয়া এমনকি বিশ্বজুড়ে শঙ্কার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে সন্দেহ নেই। অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পেমেন্ট প্রক্রিয়া আর সাইবার নিরাপত্তা নতুন করে যাচাই করে দেখছে। বাংলাদেশের জন্য সান্তনা হলো, চুরিটা ১০ গুণ খারাপ হতে পারতো। ৫টির বদলে ৩৫টি লেনদেনের সবগুলো সম্পন্ন হলে লোপাট হতে পারতো প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এটা সৌভাগ্যের বলে একমত হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
তবে, সাইবার অপরাধীদের হামলা এখানেই শেষ তা নয়। যে কোনো সময় হতে পারে আরেকটি হামলা। ঢাকায় একজন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী বললেন, ‘অপরাধী গোষ্ঠীরা ভাববে, এরা ১০০ মিলিয়ন চুরি করতে সক্ষম হয়েছে।‘ কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির ঘটনা আরও সচেতন হওয়ার বার্তা বলে অ্যাখ্যা দিলেন তিনি। 
আরও অর্থ ফেরত দেয়ার আশাবাদ ওসমেনার
বাংলাদেশের রাজকোষের লোপাট হওয়া অর্থের মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে ফিলিপাইন দিয়ে। এর মধ্যে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিম ওং এই অর্থ ফেরত দিয়েছেন। ফিলিপাইনের এবিএস-সিবিএন নিউজ জানিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নন ফিলিপাইনের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মুদ্রা বিষয়ক সিনেট কমিটির প্রধান সিনেটর সার্জ ওসমেনা। তিনি বলেছেন, আরও অর্থ তারা ফেরত দিতে চান বাংলাদেশের কাছে। পরিমাণে সেটা হতে পারে আরও তিন কোটি ডলার। কীভাবে এই তিন কোটি ডলার উদ্ধার করা যাবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। বর্তমানে এই অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন চীনা নাগরিকের সন্ধান করা হচ্ছে বলে জানান ওসমেনা। তিনি জানান, অর্থ ফেরত দেয়ার পর কিম ওংকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সে কোথায় গচ্ছিত রেখেছিল। রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেম এই অর্থ দিয়েছিল বলেই মনে করেন তিনি। ওসমেনার আশাবাদ, আগামী ৫ই এপ্রিলের পরবর্তী শুনানিতে আরসিবিসি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক দেগুইতো ও কিমং ওং দুজনেই উপস্থিত থাকবেন। কেননা, এই দুইজনের বক্তব্যের মধ্যেই অসঙ্গতি রয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে রুদ্ধদ্বার শুনানির আভাস পাওয়া গেলেও শুনানিকে উন্মুক্ত রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন এই সিনেটর।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজও আরও অর্থ ফেরত পাওয়ার আশাবাদ জানিয়েছেন।  ফেরত দেয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি বাকি টাকাও ফেরত পাওয়া যেতে পারে।’ এর আগে ফিলিপাইনের সিনেটর রালফ রেকটো বলেছিলেন, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ দ্রততার সঙ্গে কাজ করলে আরও তিন কোটি ৪০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব। ফিলিপাইনের সিনেটরদের এমন আশাবাদী বক্তব্যকে আমলে নিয়েই জন গোমেজ আরও অর্থ উদ্ধারের আশা দেখছেন।
সন্তানদের কথাতেই টাকা ফেরত দিয়েছেন কিম
এদিকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাজকোষের চুরি হওয়া টাকার ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত দিয়েছেন কিম ওং। তিনি অবশ্য বলছেন, এই টাকা তিনি পেয়েছিলেন ঋণের শোধ হিসেবে। এর আগে ফিলিপাইন সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির সামনে ওং বলেন, তার কোম্পানি ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার একশ কোটি পেসো পেয়েছে। এর মধ্যে তার কোম্পানির বেইজিংয়ের গ্রাহক গাও সু হুয়া পাঠিয়েছিলেন সাড়ে চারশ মিলিয়ন পেসো। জুয়ার ঋণ পরিশোধ করতে এই অর্থ পাঠিয়েছিলেন তিনি। আর বাকি সাড়ে পাঁচশ মিলিয়ন পেসো আগেই ক্যাসিনোর হেরে যাওয়া জুয়াড়িদের দিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্য থেকে ঋণ পরিশোধের অর্থ হিসেবে পাওয়া সাড়ে চারশ মিলিয়ন পেসো বা ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত দিয়েছেন কিম। জিএমএন নিউজের খবরে বলা হয়, নিজের সন্তানদের কথা শুনেই এই অর্থ ফেরত দিয়েছেন তিনি। ওং বলেন, ‘আমি আমার দুই সন্তানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে, আমাদের কষ্ট করতে হলেও এই টাকা তোমাকে ফেরত দিতে হবে।’ সন্তানদের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতেই টাকা ফেরত দিতে সম্মত হয়েছেন কিম ওং।

No comments

Powered by Blogger.