কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ফরেস্ট চেক স্টেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই স্টেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাঠ ব্যবসায়ীরা ৫ মার্চ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্টেশন কর্মকর্তাকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে কাঠ ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাঠ আমদানি করেন। এ ছাড়া রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের পার্বত্য অঞ্চল থেকেও কাঠ সংগ্রহ করা হয়। এসব কাঠ ট্রাকযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়। প্রতি দিন ও রাতে এই পথ দিয়ে গাছভর্তি ৭০ থেকে ৯০টি ট্রাক চলাচল করে। কাঠবোঝাই প্রতিটি ট্রাক থেকে সোনারগাঁয়ের মেঘনা ঘাট এলাকার ফরেস্ট চেক স্টেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কাঠ আমদানিকারক ব্যবসায়ী লেদু সওদাগর, আমিরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সোনারগাঁ ফরেস্ট চেক স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, বন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) সঞ্জয় হাওলাদার ও এস এম মাহবুব উল আলম ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় সরাসরি জড়িত। সোনারগাঁ ফরেস্ট চেক স্টেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কাঠ ব্যবসায়ীরা একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হোসাইন মুহম্মদ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি শ্যামল কুমার ঘোষ ওই প্রতিবেদন জমা দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি মূল কর্মস্থলের বাইরে তিন বছর ধরে সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে দ্রুত বদলি করে ওই স্টেশনে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কাঠ ব্যবসায়ীদের নেতা আলমগীর হোসেন ও মুল্লুক চান বলেন, ‘অভিযোগের ব্যাপারে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, তা লোক দেখানো। মনিরুজ্জামানকে বাঁচাতে তদন্ত কমিটির প্রধান শ্যামল কুমার ঘোষ তাঁর সঙ্গে যোগসাজশ করেন। তিনি আমাদের কারও বক্তব্য না নিয়ে মনিরুজ্জামানসহ ওই স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিখিত বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আমরা বিষয়টি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, ‘কাঠ ব্যবসায়ীদের পাওয়া যায়নি। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ সোনারগাঁ ফরেস্ট স্টেশনের ফরেস্টার সঞ্জয় হাওলাদার ও এস এম মাহবুব উল আলম বলেন, ‘আমরা কোনো দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’
ঢাকা সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমি দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। সরকার আমাকে ওই স্টেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। আমি ভালো লোক হওয়ায় আমাকে বদলি করা হচ্ছে না।’

No comments

Powered by Blogger.