প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন

প্রতিবেশী মিয়ানমারে গত বুধবার একজন বেসামরিক ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন, এবং আজ দেশটিতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটি বেসামরিক সরকারের কাছে। প্রেসিডেন্ট থিন কিউ ও মিয়ানমারের জনসাধারণের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল। অং সান সু চির প্রয়াত স্বামী ও জীবিত দুই সন্তান বিদেশি (ব্রিটিশ) নাগরিক—এই অজুহাতে তাঁর প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণে সাংবিধানিক বাধা থাকায় তাঁরই ইচ্ছায় তাঁর শৈশবের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা থিন কিউ এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে সাধারণভাবে এটা স্পষ্ট যে অং সান সু চিই নতুন সরকারের প্রধান নীতিনির্ধারক। মিয়ানমারের যে জনসাধারণ গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চি ও তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিপুল ভোটে ভূমিধস বিজয় এনে দিয়েছেন, তাঁরাও মনেপ্রাণে তাঁকেই প্রধান নেতা হিসেবে মানেন। অং সান সু চি চারটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকবেন। প্রেসিডেন্ট থিন কিউ শপথ গ্রহণের পর বলেছেন, তাঁর নতুন সরকার একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেবে, যেটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বলা বাহুল্য, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কেননা দেশটির সংবিধানে অনেক অগণতান্ত্রিক বিধান রয়ে গেছে। পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত, প্রধান সেনাপতি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্য থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন, এবং সর্বোপরি সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ভেটো প্রদানের ক্ষমতা—এসব বিধান যত দিন সংবিধানে থাকবে, তত দিন রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি গড়ে ওঠা কঠিন। তবে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একটি বেসামরিক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের অর্ধশতকের বেশি সময়ের নিরঙ্কুশ সামরিক নিয়ন্ত্রণের অবসান অবশ্যই দেশটিতে এক নতুন যুগের সূচনা। এরপর থেকে জাতীয় সংহতি, শান্তি, শিক্ষাবিস্তার, দারিদ্র্য লাঘব, রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক বিকাশের পথের বাধাগুলোও অপসারিত হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা যে দেশটিতে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর ওপর বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটবে।

No comments

Powered by Blogger.