বিএনপি জামায়াত দূরত্ব by কাজী সুমন

ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন নেই বললেই চলে। গত কয়েক মাসে জোটের কোনো বৈঠকেই যোগ দেয়নি জামায়াত। পৌরসভা নির্বাচনের পর ইউপি নির্বাচনেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি বিএনপির।
বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরেই ভাটার টান চলছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে। তবে বিএনপি বা জামায়াত কোনো দলই আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভাঙার দায় নিতে রাজি নয়। যে কারণে ঘোষণা দিয়ে হয়তো জামায়াত জোট ত্যাগ করবে না। বিএনপিও এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেবে না। তবে অস্তিত্বের সংকটে থাকা জামায়াত এরই মধ্যে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও বিকল্প চিন্তা করছে। দলের অনূর্ধ্ব ৬০ বছর বয়সী নেতাদের নিয়ে নতুন দল গঠনের আলোচনাও রয়েছে।
গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ইউপি নির্বাচন নিয়ে ২০ দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক শেষে মির্জা আলমগীর ইউপি নির্বাচনে ২০ দল ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই বৈঠকে অংশ নেননি জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত ও এলডিপির কোনো প্রতিনিধি। ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনে জোটের দুই শরিক দলের যোগ না দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান মির্জা আলমগীর। এতে জামায়াতসহ কয়েকটি শরিক দলের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান শরিকদের জন্য ২০টি ইউপিতে ছাড় দেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতা জানান, জামায়াত, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি দল নিজেদের মতো করে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে ইউপি নির্বাচনে সমঝোতার বিষয়ে জোটের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচন নিয়ে জোটের সমন্বয় সভায় আমাদের নামেমাত্র ডাকা হয়েছিল। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের একটি বৈঠকের নামে ফটোসেশন করা হয়। বিএনপির সিদ্ধান্তগুলো শুধু আমাদের জানিয়ে দেয়া হয়। নির্বাচনে শরিক দলগুলোর কোনো প্রার্থী আছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। এর আগে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন সমন্বয় সভায়ও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি অংশ নেননি। এছাড়া উপজেলা ও পৌরসভায় ২০ দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। তখন এলডিপি ও জাতীয় পার্টিকে (জাফর) দুটি পৌরসভায় ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে প্রথমদিকে সমঝোতা না হওয়ায় একপর্যায়ে মির্জা আলমগীর বলেছিলেন, স্থানীয়ভাবে জামায়াতের প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি জামায়াতের সঙ্গে। দুটি উপজেলায় তাদের প্রার্থী জয়ও পায়। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, ২০ দলীয় জোট একরকম মৃত অবস্থায় আছে। তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই। বিএনপির দরকার ‘২০’ সংখ্যাটিকে টিকিয়ে রাখা। তাই জোট থেকে ছোট কোনো দল বেরিয়ে গেলেও তাদের কিছু যায়-আসে না। বিএনপির কোনো কর্মীকে ওই দলের চেয়ারম্যান করে ২০ সংখ্যাটি তারা ঠিক রাখবে। কারণ, ২০ দলের মধ্যে কয়েকটি দল রয়েছে যাদের গুটি কয়েকজন নেতা ছাড়া আর কোনো কর্মী নেই।
দুটি বৈঠকে জামায়াতের অংশ না নেয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। জামায়াত নেতারা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। এজন্যই হয়তো দলটির কোনো নেতা বৈঠকে যোগ দিতে পারেনি। তার মানে এই নয় জামায়াত ২০ দলীয় জোটে নেই। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ার বিষয়ে অনেকটা একই যুক্তি তুলে ধরেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা।
এদিকে, জামায়াত নেতাদের নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনাও শোনা যাচ্ছে। দলটির নাম হতে পারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। যুদ্ধাপরাধের অপবাদ ঘুচাতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের দলটির নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে। তবে জামায়াত এক্ষেত্রে বিলুপ্ত করা হবে না। একটি অংশ জামায়াতেই থেকে যাবেন।

No comments

Powered by Blogger.