১/১১–র কুশীলবদের বিচার হয়নি কেন? by মশিউল আলম

১৬ জুলাই ২০০৭। গ্রেপ্তারের পর ঢাকার আদালতে
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা -ফাইল ছবি
ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা করার যে নজিরবিহীন তৎপরতা দেখলাম, তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াবে কে জানে। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৭৮টির মতো মামলা দায়ের করার ঘটনা অস্বাভাবিক।
আজ থেকে আট-নয় বছর আগে, ২০০৭-০৮ সালে ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাহ্ফুজ আনামের ডেইলি স্টার কী প্রতিবেদন ছেপেছে, তার বিচার চেয়ে এতগুলো বছর পরে মামলা করার পাইকারি উৎসাহের তাৎপর্য কী, তা জানি না। জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে যাঁরা মাহ্ফুজ আনাম ও ডেইলি স্টার-এর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যাঁরা মামলা দায়ের করছেন, যাঁরা টিভি টক শোতে নানা কথা বলছেন, তাঁদের একটা সাধারণ অভিযোগ হলো, মাহ্ফুজ আনাম ও ডেইলি স্টার সাংবাদিকতার মাধ্যমে শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার ও কারাভোগের ‘পটভূমি’ তৈরি করেছিল। কিন্তু এ অভিযোগ কতটা বাস্তব তথ্যভিত্তিক? আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়াকে যাঁরা গ্রেপ্তার করেছিলেন ও দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে আটকে রেখেছিলেন, তাঁরা কি আসলেই ডেইলি স্টার ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের দ্বারা ‘পটভূমি’ তৈরির অপেক্ষায় ছিলেন?
স্মরণ করা যাক
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোররাতে, ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে। ওই ছয় মাস ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নানা কিছু করার চেষ্টা চলেছে। অগণতান্ত্রিক পন্থায় গণতন্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব যাঁরা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রথম পরিকল্পনা (প্ল্যান এ) ছিল দেশের দুই প্রধান নেত্রীকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করা। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমেরিকা ও কানাডা যান; সে সময় গুঞ্জন ওঠে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে আর দেশে ফিরতে দেবে না। শেখ হাসিনা ১৩ মার্চ ভিসা নবায়ন করতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে গেলে দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হবে—এটা নিয়ে তাঁর কোনো উদ্বেগ আছে কি না। শেখ হাসিনা তখন তাঁদের বলেন, তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন, এমনকি সে জন্য তাঁকে যদি ভারত হয়ে চোরাপথে সীমান্ত অতিক্রম করেও দেশে ঢুকতে হয়, তবু তিনি ফিরে আসবেন (তথ্যসূত্র: উইকিলিকস বার্তা ১৩ মার্চ, ২০০৭)। তিনি আমেরিকা যাওয়ার পর তাঁর ফিরে আসা ঠেকাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ন্যক্কারজনকভাবে নানা কারসাজি করেছিল। ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল এক গোপনীয় তারবার্তায় ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের সদর দপ্তরকে বলেন, ‘দুই “পরিবারতান্ত্রিক” রাজনৈতিক দল...তাদের ধ্বংস করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে “দুই ভদ্রমহিলাকে” স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করার জন্য সামরিক বাহিনী তাঁদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।’ কিন্তু কোনো চাপেই হাসিনা দেশে ফিরতে পিছপা হননি। তিনি ৫ মে স্বদেশে ফিরে আসেন।
তারপর শুরু হয় তত্ত্বাবধায়কদের ‘প্ল্যান বি’ বা দ্বিতীয় পরিকল্পনা। সেটা ছিল: ফৌজদারি দণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে দাঁড়াতে অযোগ্য ঘোষণা করে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার আইনগত পটভূমি তৈরির কাজ শুরু করা হয় তারও আগে থেকে।
ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার কোম্পানির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ফারুক, ইস্টকোস্ট ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী, ইউনিক গ্রুপের পরিচালক নূর আলী প্রমুখ ব্যবসায়ীকে দিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে জোরজবরদস্তি করে অনেক মামলা দায়ের করানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাগুলোও সক্রিয় করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রায় দুই মাস আগে ২০০৭ সালের ২৮ মে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে। তাঁকে ভীতিকর পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। ১৯ জুন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস ওয়াশিংটনে তাঁর সদর দপ্তরকে এক গোপনীয় তারবার্তায় লেখেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের সূত্রগুলো আমাদের বলছে, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা নিয়ে কাজ করছে।’ ওই তারবার্তার শেষে রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির দুই শীর্ষ নারীকে (The two grande dames of Bangladeshi politics) রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য করার লক্ষ্যে সরকার প্রায় নিশ্চিতভাবে এক ত্রিমুখী আক্রমণ সমন্বয় করছে: আদালতে মামলা, একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও দলীয় সংস্কারের উদ্যোগ।...আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মামলাগুলোর অধিকাংশই দায়ের করছেন সেই সব ব্যক্তি, যাঁদের সদ্য ধরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে এসেই তাঁরা মামলাগুলো দায়ের করছেন।’
শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা, দীর্ঘ সময় ধরে কারারুদ্ধ করে রাখা, সর্বোপরি তাঁদের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার জবরদস্তিমূলক ও অপরিণামদর্শী তৎপরতার এসব ঘটনা বেশি পুরোনো নয়। আমাদের সবারই সেসব দিনের কথা মনে আছে। নতুন করে এগুলোর বিশদ বর্ণনা অপ্রয়োজনীয়। সংক্ষেপে আর একটা তথ্য জানাই। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর, ২০০৭ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি এক গোপন তারবার্তা ওয়াশিংটনে পাঠান। উইকিলিকসের মাধ্যমে পাওয়া সেই তারবার্তা থেকে জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পরপরই ডিজিএফআইয়ের কাউন্টার-টেররিজম বিভাগের তৎকালীন প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন ‘বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার উদ্দেশ্যে’ দূতাবাসের প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সাক্ষাৎ চাইলে ১৭ জুলাই তাঁদের সাক্ষাৎ ঘটে। সেখানে ব্রিগেডিয়ার আমিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি ও অন্যদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়া—উভয়কে সসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দুজনই সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে শেখ হাসিনাকে আগের দিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং খালেদা জিয়াকে অচিরেই গ্রেপ্তার করা হবে।’
অর্থাৎ, দুই নেত্রী যদি ‘সসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তাব’ গ্রহণ করতেন, তাহলে তাঁদের গ্রেপ্তার, কারাভোগ, ডজন ডজন মামলা ইত্যাদি কোনো কিছুরই মুখোমুখি হতে হতো না। ব্রিগেডিয়ার আমিন সেদিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে ‘সমতা সৃষ্টি’র খাতিরে; অর্থাৎ যেহেতু শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেহেতু খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের আড়াই মাস পর, ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।
সুতরাং, এটা খুব পরিষ্কার যে ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার, কারাভোগ ইত্যাদি ছিল ওই সরকারের সামরিক নেতাদের পূর্বসিদ্ধান্তের বিষয়। ডেইলি স্টার ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে কী প্রকাশিত হয়েছে, তার ওপরে সেই সিদ্ধান্ত মোটেও নির্ভরশীল ছিল না।
এখন, এতগুলো বছর পরে বিচার চেয়ে মামলা যদি করতেই হয়, তো সেটা মাহ্ফুজ আনাম ও ডেইলি স্টার-এর বিরুদ্ধে কেন? বিচার যদি চাইতেই হয়, তাহলে যাঁরা তাঁকে ভোররাতে গ্রেপ্তার করে বিরাট নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করেছিলেন, তারপর কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন এবং সেখানে প্রায় একটা বছর বন্দী করে রেখেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হয়নি? এবং সেটা ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় নেওয়ার অব্যবহিত পরেই কেন করা হয়নি? ২০০৯ সাল থেকে তো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় রয়েছে।
আমরা স্মরণ করতে পারি
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পরেও সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল মইন উ আহমেদ, যাঁকে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘আর্কিটেক্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি। জেনারেল মইন ২০০৯ সালের ১৪ জুন অবসরে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় মাস সেনাপ্রধানের পদে চাকরি করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই।
জরুরি অবস্থাকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা ‘এক-এগারো’র আরেক ‘আর্কিটেক্ট’ ছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সন্ত্রাস ও গুরুতর অপরাধ দমনসংক্রান্ত ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। যাঁর ভূমিকা শেখ হাসিনাসহ অন্য রাজনীতিকদের যথেষ্ট ভোগান্তির কারণ হয়েছিল। তিনি তখন ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, এরপরই তিনি হন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও)। ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বে মহাজোট সরকারের অধীনে তিনি পররাষ্ট্র বিভাগের চাকরিতে বহাল থেকেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার পদে। ২০১১ সালের জুনে তাঁর সেনাবাহিনীর চাকরি শেষ হয়ে গেলেও পররাষ্ট্র বিভাগের অধীনে তাঁর চাকরি অব্যাহত রাখা হয়। হাইকমিশনার হিসেবে তিনি বহাল থাকেন ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০০৮-এর নির্বাচনের পরের মহাজোট সরকারের পুরো মেয়াদেই। এ জন্য তাঁর চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয় চারবার।
তত্ত্বাবধায়ক আমলের ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও একাধিক সামরিক-বেসামরিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
ওই সময় ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতাধর পরিচালক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সুবিদিত। তিনিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল ছিলেন। ওই তারিখে তাঁকে সকল সুবিধাসহ বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তিনি সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে।
ডিজিএফআইয়ের আরেক পরিচালক চৌধুরী ফজলুল বারী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে বিদেশি মিশনে চাকরি নিয়ে চলে যান। আওয়ামী লীগ সরকার এসে তাঁকে দেশে ফিরে আসতে বলে। কিন্তু তিনি ফিরে না আসায় সেনাবাহিনী তাঁকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে। এরপর সব সুবিধাসহ তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতেন আরেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। সংবাদমাধ্যমগুলোতে রাজনীতিকদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করতেন মূলত তিনিই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
ওই সময় ডিজিএফআইয়ের আরেক পরিচালক, যিনি মিডিয়া ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দায়িত্বে ছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি এই গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক হন এবং পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এখনো তিনি চাকরিতে বহাল আছেন।
শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ১১ মাস কারাগারে আটকে রেখে যে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিকার চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখনই উদ্যোগ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি বা তাঁর সরকার সে রকম কিছু করেননি। ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের কৃতকর্মের বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি; হয়তোবা নিতে চাননি, দৃশ্যত ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপনীয় তারবার্তায় লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি মইনসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবেন না (would not seek retaliation), যদিও তা নেওয়ার জন্য তাঁর নিজের দলের ভেতর থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।’
বিষয়টি গতকালও সংসদে আলোচনায় আসে। সেখানে ওই সময়ের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি করেন কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এক-এগারো পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে ওই ঘটনার তদন্ত করেছিলেন তিনি। এক-এগারোর কুশীলবদের এতে সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন। সুপারিশও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুপারিশ প্রকাশিত হয়নি। হিমঘরে চলে গেছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ ছিল। সেটাও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.