সাংবাদিকদের আদালতে থাকতে দেয়া হয়নি

বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলার বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা একটানা জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চলে সাক্ষ্যগ্রহণ। ওই ঘটনায় করা দুটি মামলার একটির বাদী ডা. বিজয় কুমার পাল আদালতে সাক্ষ্য দেন। ডা. বিজয় কুমার পাল ৭ খুনের ঘটনায় নিহত আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের বড় মেয়ের জামাতা। উভয় মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামিদের মধ্যে গতকাল ২২ জনের আইনজীবী বাদীকে জেরা করেন। ৩ জনের পক্ষে আদালতে সময় প্রার্থনা করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। উপস্থিত বাকি ১০ আসামির আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় তারা বাদীকে জেরা করতে পারেননি। বিচারক এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আগামী ৭ই মার্চ। এ ছাড়া আগামী ৩রা মার্চ ৭ খুনের ঘটনায় করা অপর মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটির সাক্ষ্য নেয়ার তারিখ ধার্য করেন বিচারক। সেলিনা ইসলাম বিউটি গতকালও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিচারকাজ শুরুর আগে আদালতের এজলাস থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে এজলাসে প্রবেশে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক বিচারকাজ শুরু হলেও ডা. বিজয় সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় দাঁড়ান সকাল পৌনে ১১টায়। এরপর তিনি আদালতের উদ্দেশে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত একে একে ২২ আসামির আইনজীবী বাদীকে জেরা করেন। ২২ আসামির মধ্যে ১০ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি ১২ আসামি পলাতক। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবীরা জেরা করেন। এদিকে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এবং উপ-অধিনায়ক এম এম রানার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। বিচারক তা মঞ্জুর করে আগামী ৭ই মার্চ বাদীকে জেরার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। বাদীপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আসামিপক্ষ গতকালও সাক্ষ্য গ্রহণ বানচাল করার চেষ্টা করেছিল। তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি বিজ্ঞ বিচারকের কারণে। আদালতে একটি মামলার বাদী ডা. বিজয় কুমার পাল সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর আগে আগামী ৩রা মার্চ অপর মামলার বাদী ডা. সেলিনা ইসলাম বিউটির সাক্ষ্য দেয়ার তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আদালতে পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, গতকাল ৭ খুনের ঘটনায় করা ২ মামলার একটির বাদী ডা. বিজয় কুমার পাল সাক্ষী দিয়েছেন। এ ছাড়া অপর মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি আদালতে উপস্থিত থাকলেও সময় সংকুলান না হওয়ায় তার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ৩রা মার্চ ধার্য করা হয়েছে। এর আগে গতকাল সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে ৫ এবং নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ১৮ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে যারা উপস্থিত ছিল তারা হলে নূর হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরজিও-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া ও বিল্লাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনসটেবল শিহাবউদ্দিন, এসআই পুণেন্দু বালা, ল্যান্স করপোরাল রহুল আমীন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনসটেবল বাবুল হাসান, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী মোস্তফা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী ও আবুল বাশার। এখনও পলাতক যে ১২ জন : সাত খুনের ঘটনায় আদালতে যে ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠিত হয়েছে তার মধ্যে এখনও ১২ জন পলাতক রয়েছে। ওই ১২ জনের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ৪ সহযোগী রয়েছে। বাকিরা র‌্যাব-১১-এর সাবেক সদস্য। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে মোট ২১ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ ছাড়া ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ১৫ র‌্যাব সদস্যসহ ২০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭শে এপ্রিল আদালত থেকে ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে অপহৃত হন। অপহরণের ৩ দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও পরদিন ১লা মে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.