আলুর বিকল্প কেন হতে চলেছে কলা?

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে কলার গুরুত্ব বাড়তে চলেছে৷  বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের অন্যতম খাদ্য হয়ে উঠতে পারে কলা৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে এই তথ্য৷ কলার সঙ্গে মানুষের পরিচয় বহুদিনের৷ পাকা কলা খেতে যেমন মজা, তেমনি কাঁচা কলা ভর্তা কিংবা রান্না বাঙালির অন্যতম প্রিয় এক খাবার৷ এই কলার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল, এমনটাই বলছেন সিজিআইএআর এগ্রিকালচার পার্টনারশিপের গবেষকদের৷ তাদের ভাষ্য হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আলুর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে কলা৷ বিশ্ব উষ্ণায়ণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাসাভা এবং স্বল্প পরিচিত কাউপিও হয়ে উঠতে পারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য৷ ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এই তথ্য৷ জাতিসংঘের ‘কমিটি অন ওয়ার্ল্ড ফুড সিকিউরিটি'-র অনুরোধের প্রেক্ষিতে গবেষকরা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২২টি কৃষিপণ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন৷ গবেষকদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়ণের সঙ্গে মানিয়ে চলতে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে৷ তাদের ধারণা, ক্যালোরির বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন খাদ্য শস্য – ভুট্টা, চাল এবং গমের উৎপাদন ভবিষ্যতে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কমে যাবে৷ একইসঙ্গে আলুর উৎপাদনও ভবিষ্যতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে৷ কেননা, আলু উৎপাদনের জন্য শীতল পরিবেশ প্রয়োজন৷ উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে অনেকে দেশে এই সবজি উৎপাদনের মতো পরিবেশ থাকবে না৷ গবেষকদের ধারণা, এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে থাকা এলাকা, যেখানে এখন আলু চাষ হচ্ছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের কলা চাষ করে ভালো ফল পাওয়া যাবে৷ এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ড. ফিলিপ থর্নটন বিবিসিকে জানিয়েছেন, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিছু অঞ্চলে আলুর বিকল্প হতে পারে কলা৷ গবেষকরা তাদের প্রতিবেদনে প্রোটিন এবং ক্যালোরির বিবেচনায় গমকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ তবে তাদের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গমের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়৷ কেননা তুলা, ভুট্টা আর সোয়াবিনের দাম বেশি হওয়ায়, গম কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও এই কারণটি গমের ভবিষ্যতকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে৷ এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বিকল্পের কথাও জানিয়েছেন গবেষকরা৷ তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় গমের বিকল্প হতে পারে কাসাভা৷ কিন্তু নতুন এসব খাদ্য সাধারণ মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে সেটা অবশ্য ভাবার মতো বিষয়৷ জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা গোষ্ঠী, সিসিএএফএস'এর প্রকল্প পরিচালক ব্রুস ক্যাম্পবেল অবশ্য আশাবাদী৷ বিবিসিকে তিনি জানান, ভবিষ্যতে যেসব পরিবর্তন হতে পারে, সেসব অতীতেও হয়েছে৷ ব্রুস বলেন, ‘‘দুই দশক আগে আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে চালের চাহিদা একরকম ছিল না বললেই চলে৷ কিন্তু এখন সেখানে চালের চাহিদা রয়েছে৷ দামের কারণে মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন এসেছে৷ চাল সহজলভ্য, রান্নাও সহজ৷ আমি মনে করি, এই ধরনের পরিবর্তন অতীতেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে৷'' খাদ্য তালিকায় ভবিষ্যতে প্রোটিনের উপস্থিতি কীভাবে ধরে রাখা যায়, তা নিয়েও খানিকটা উদ্বিগ্ন গবেষকরা৷ বর্তমানে সোয়াবিন হচ্ছে প্রোটিনের অন্যতম উৎস৷ কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে সোয়াবিন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে৷ তখন কি হবে? গবেষকরা অবশ্য এক্ষেত্রেও একটি বিকল্পের কথা বলেছেন৷ সাব-সাহারান আফ্রিকায় ‘গরীবদের মাংস' হিসেবে বিবেচিত কাউপি হতে পারে সোয়াবিনের বিকল্প৷ কেননা, কাউপি খরা-সহিষ্ণু এবং অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রায় এটি উৎপাদন করা যায়

No comments

Powered by Blogger.