ওসমানী জানিয়ে দেন, ভারতের খবরদারি বন্ধ না হলে তিনি পদ ছেড়ে দিবেন

নির্লোভ মহানায়ক আতাউল গনি ওসমানী
তাজউদ্দীন ও ওসমানী বিএলএফকে (মুজিব বাহিনী) বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক চেষ্টা করেন। অবশ্য তাতে কোন কাজ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে ওসমানীর নিজের কিছু চিন্তাভাবনা ছিল। তিনি এ ব্যাপারে ভারতের নাক গলানো পছন্দ করতেন না। মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের সঙ্গে ভারতীয় কতৃপক্ষ সরাসরি যোগাযোগ রাখতে চাইত। কলকাতায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ওসমানী সাফ জানিয়ে দেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের খবরদারি বন্ধ না হলে তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদ ছেড়ে দেবেন। তার মন্তব্য ছিল ‘যদি এটা ভারতের যুদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা ইসলামাবাদ থেকে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে আনতে সাহায্য করছে মাত্র। তিনি সবাইকে অবাক করে একটা ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে সভা থেকে বেরিয়ে যান।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত ‘ বিএনপি সময়-অসময়’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লেখা হয়েছে। এর তথ্য সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বি. জেড খসরুর লেখা বই ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যূ অ্যান্ড সিআইএ লিঙ্ক’। মহিউদ্দিন আহমদ একই সূত্রের বরাতে আরও লিখেছেন, ১২ই জুলাই বসল সেক্টর কমান্ডারদের সভা। প্রধান অতিথি তাজউদ্দীন, প্রধান বক্তা হিসেবে ওসমানীর থাকার কথা। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত। বার্তা পাঠালেন তিনি আসতে পারবেন না। সভায় গুঞ্জন উঠল। তাজউদ্দীন চেষ্টা করলেন সবাইকে শান্ত রাখতে; বললেন, ওসমানীর ওপর কমান্ডারদের আস্থার অভাব থাকায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। এই কথা শুনে সভায় হইচই হলো। কেউ কেউ জানতে চাইলেন, এই খবরের সূত্র কি তা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে।
কমান্ডারদের মধ্যে মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর এম এ জলিল, মেজর খালেদ মোশাররফ এবং উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই ওসমানীর সঙ্গে দেখা করে তাকে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করে যেতে বললেন। ওসমানী পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নিতে রাজি হন। কমান্ডাররা এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীনের কাছে যান এবং ওসমানীর পদত্যাগের কথিত কারণের সূত্র প্রকাশ করার জন্য তাজউদ্দীনকে চাপ দেন। তাজউদ্দীন বলেন, তিনি নিজস্ব সূত্রে এটা জেনেছেন যে কোনো কোনো কমান্ডার ওসমানীর ওপর খুশি নন। জিয়াউর রহমান তখন বলেন, ওসমানীর ওপর তাদের পুরোপুরি আস্থা আছে এবং এই পদে কোন পরিবর্তন আনা হলে তাদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাজউদ্দীন জিয়ার প্রস্তাব মেনে নেন। সভায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম চুপচাপ বসে ছিলেন। তাজউদ্দীন তার কথা রেখেছিলেন। ওসমানী পরদিন তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন এবং সেক্টর কমান্ডারদের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহর মতে, জিয়া ওসমানীর অব্যাহতি চেয়েছিলেন। কেননা ওসমানীকে জিয়া একজন দুর্বল নেতা মনে করতেন। জিয়া চেয়েছিলেন একটা সামরিক পরিষদ যুদ্ধ পরিচালনা করুক। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ ছিলেন ওসমানীর পক্ষে। খালেদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কেউ যদি ওসমানীকে সরাতে চায় তাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাধা দেয়া হবে।
ডালিমের বর্ণনায় জানা যায়, তিনি ও নূর ওই সময় থেকেই সমমনা কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে ‘ভারতের খবরদারি’ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা ছিল এবং তারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

No comments

Powered by Blogger.