জাপা চেয়ারম্যানের কাছে মানবিক আবেদন by মিনা ফারাহ

‘যারাই শান্তিপূর্ণ বিপ্লবকে অসম্ভব করে, তারাই রক্তাক্ত বিপ্লবকে অনিবার্য করে’- ১৯৬২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির এ উক্তিটি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের গর্ভধারণ এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার একটা কারণ হতে পারে। পরবর্তী সময়ে পোড়া ঘরে পেট্রল ঢালতে ‘ইকোনমিস্ট’ খ্যাত দুই ফাইটিং বেগমের সাথে যুক্ত হলেন তিন নম্বর ফাইটিং বেগম। ২৬ জানুয়ারি মানবজমিন, ‘প্রকল্পের নাম আসল বিরোধী দল’। প্রত্যেক রাজনীতিবিদই জানেন, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত ‘জঙ্গিবাদ’ কোথাও যাচ্ছে না এবং সঙ্ঘাতমূলক পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী জাতীয় পার্টি। কারণ তাদের জন্য না হলে, অনির্বাচিত পার্লামেন্ট কেন হতো না, এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে নর্দমার দুর্গন্ধের মতো। বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই অমানবিক, কেউ মরলে, ফাইটিং বেগমদের শোক জানানোর মধ্য দিয়ে মৃতব্যক্তির পরিচয় জানতে হয়। রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগে বাংলাদেশে উগ্রপন্থী তৎপরতা যে ক্রমেই বাড়বে, বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞান বলে, নিন্মচাপ থেকেই সুনামি।
বয়স ৮৬ কিন্তু হাবভাবে যুবক, ক্ষমতার খাইখাই এখনো তরুণদের মতো। সব কিছুরই বয়স আছে, যৌবনে যা মানায়, বার্ধক্যে তা মানায় না। ৫ জানুয়ারি প্রতিহত করার ক্ষমতা একমাত্র তারই ছিল, কারণ তারাই একে অপরের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরছেন এবং ঘোরাচ্ছেন। কিন্তু ‘আসল’ বিরোধী দল হওয়ার খেলায় ভবিষ্যতে আরো কত মানুষের প্রাণ যেতে পারে, এ ব্যাপারে তারা ড্যাম কেয়ার হওয়ার কারণ, প্রত্যেকের হাবভাবে যেন মরণোত্তর ক্ষমতারও গ্যারান্টি। নতুন করে শুরু হলো তিন নম্বর ফাইটিং বেগমের সাপ খেলা, ২০৪১ সালে যার শতবর্ষ পূর্ণ হবে। ৮৩ বছর বয়সে মাথায় বুলেট ঠেকিয়ে বলেছিলেন, দেশবাসীর সাথে কিছুতেই প্রতারণা করবেন না। ৮৬ বছর বয়সেও স্বভাব গেল না। অভিশাপের হাত থেকে সহসাই মুক্তি আসছে না। জাপা চেয়ারম্যানের অতীত-বর্তমান আমলে নিয়ে আধ্যাত্মিক আলোচনাই সময়োপযোগী।
ত্রিখণ্ড ভারতের অনেক রাষ্ট্রনায়কই বয়সের দিক থেকে চেয়ারম্যান এরশাদের মতো সৌভাগ্যবান নন। অল্প বয়সেই কেউ ফাঁসির মঞ্চে, কেউ অভ্যুত্থানে, কেউ আততায়ীর গুলিতে খুইয়েছেন অমূল্য জীবন। তাতে কার কী লাভ হয়েছে জানি না। তবে ক্ষমতার মতো জীবন একখণ্ড তিলেখাজা নয়। রাজনীতির তুরুপের তাস ৮৬ বছরের তরুণ চেয়ারম্যানের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন চেয়ারম্যান মাও-এর মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে কম বয়সে অর্থাৎ ৮৩। মৃত্যুঞ্জয়ীকে জানতে চাই। জার্মানি আছে; কিন্তু নাৎসি পার্টি ফের ক্ষমতায় এলেও হিটলারের ক্ষমতা নেই চ্যান্সেলর হওয়ার। কথাটির অর্থ গভীর। বুড়ো বয়সেও এরশাদ দম্পতির খাইখাই দেখে মনে হচ্ছে, তিন ফুট অন্ধকার ঘরের চিন্তা মাথায় নেই। কিন্তু গোরস্থানের নামফলকগুলো সে কথা বলে না। বয়স্ক রাজনীতিবিদদের মৃত্যুঞ্জয়ী আচরণ, দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। তবে এখন বকধার্মিক হলেও চেয়ারম্যানের ধর্মভীরু আচরণের বহু প্রমাণ তিনি নিজেই।
যতই নামাজ পড়–ন, যতবারই হজ করুন, মিথ্যাবাদী এবং দুর্নীতিবাজদের আল্লাহ কি সহজে ছেড়ে দেবেন? বকধার্মিকেরা ইতোমধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন মাথায় রেখে কুকর্মে নেমে পড়েছে। পোস্টারে নামাজি ছবি, মাজারে-দরগায় ধর্মের ট্যাবলেট বানিয়ে ভোট প্রার্থনা শুরু হয়েছে। তবে ষড়যন্ত্রের অংশীদার হওয়া ইতোমধ্যে অতি বুড়ো চেয়ারম্যানের বয়সের সাথে কি মানায়? কোনোরকম ব্যতিক্রম ছাড়াই দল এবং পরিবারহীন পরকালই বাস্তবতা। জাপা চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগেরই যে বয়স, ক্ষমতার খাইখাই বাদ দিয়ে মৃত্যুচিন্তাই কাম্য, কিন্তু তারাই সবচেয়ে বড় প্রতারণার প্রমাণ। অহেতুক মৃত্যুর কারণ হওয়ার শাস্তির বিধানও আসমানি কিতাবে। মৃত্যুর পর সত্যি সত্যিই সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হতে হলে, ৫ জানুয়ারির কী জবাব দেবেন, এর প্রস্তুতি দ্রুত শেষ করা উচিত। চেয়ারম্যানকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিশেষ দূত রাখতে চাইলেও, বাস্তব ভিন্ন কথা বলে।
অদৃশ্য বার্ধক্যকে যৌবনের রুজলিপস্টিক মাখিয়ে সাময়িক প্রতারণা সম্ভব, যা পরকালে অসম্ভব। মৃত্যুচিন্তা অদৃশ্য বলেই জন্মপ্রক্রিয়া সচল। একমাত্র মৃত্যুই মৃত্যুঞ্জয়ী। ‘ডেজার্ট স্টর্ম’ খ্যাত বাবা বুশ যে দিন প্রায় দুই হাজার ইরাকি সৈন্যের বেরিয়ে আসার সুড়ঙ্গপথে বুলডোজার মারলেন, তখন তিনি টগবগে যুবক। বর্তমানে হুইল চেয়ারে, এ কথা মনে থাকে না। জাপা চেয়ারম্যান অনেক সৌভাগ্যবান, ৮৬ বছর বয়সেও তিন ফাইটিং বেগমের ‘কোহিনূর’। জিম্বাবুয়ের স্বৈরাচারী মুগাবের পর সক্রিয় রাজনীতিতে রেকর্ড এরশাদেরই। ৩০ বছর ক্ষমতা ভোগের পরও, ৯৩ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট মুগাবের খায়েশ মেটেনি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের আচরণও সেই রকম। আর তিন নম্বর ফাইটিং বেগমের ঝুড়িতে নতুন ‘পাইথন’, মানবতার বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা। অভিশপ্তরা আর কতকাল?
জাপা চেয়ারম্যানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের আয়ুষ্কাল, বিশ্বে প্রথম ১০ জনের একজন। বহু মানুষ এর চেয়ে কম সময় বাঁচে। জিয়াউর রহমান তাকেই চিফ অব আর্মি স্টাফ বানানোর পর থেকেই ক্ষমতার লাগাম আষ্টেপৃষ্ঠে। মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুজিব আমলে ফিরে আসামাত্র সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদ, ১৯৮২ সালে সিএমএলএ। ১৯৮৩ থেকে ’৯০ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি। আজ অবধি তুরুপের তাস। ১৭ কোটি মানুষের জীবন বিষাক্ত করছেন তিন ফাইটিং বেগম এবং ২০৪১ পর্যন্ত জাপাই কোহিনূর। যে দুই বেগম তাকে গদিছাড়া করলেন, তারাই তার সৌভাগ্যের কাছে পরাজিত। শাড়ি পুরান হলে কাঁথা হয়, বস্তা পুরান হলে গরুর শীতবস্ত্র হয়। একমাত্র বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরাই পুরান হন না। আর তাই মুগাবেকে পরাজিত করা চেয়ারম্যান সাহেবও ৮৬ বছর বয়সে বসন্তের গোলাপের মতো নবীন, রাজনীতি এবং তরুণীরা এখনো নাকি তাকে নিয়ে টানাটানি করতে চান। তিন ফুট নামফলকের নিচে স্থায়ী ঘরটির চিন্তা থাকলে এসব সম্ভব হতো না। ২০৪১ সাল পর্যন্ত এক ব্যক্তিই যদি ক্ষমতায় থাকেন, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বই অনুযায়ী, জাপা ছাড়া আওয়ামী লীগের বিরোধী দল বলে আর কারো অস্তিত্ব নেই। সিলেটের ভোট প্রার্থনাও মহামারীর উপসর্গ। ২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দেয়া ব্যক্তিই শুধু মুগাবে-এরশাদকে পরাজিত করতে পারেন। তবে ওই সালে ধনী রাষ্ট্র, অর্থাৎ বিশ্বব্যাংক ফর্মুলা অনুযায়ী ১০৮৬ থেকে ১২৪৭৬ ডলার মাথাপিছু আয় হতে হলে, বাস্তব কী বলছে, বুড়ো চেয়ারম্যানের গ্রাহ্য করা উচিত। ২০৪১ সালে মুগাবের বয়স যখন ১১৭, জাপা চেয়ারম্যানের ১১১, রওশনের ১০০, হাসিনার ৯৪। তবে ওই সালে মুগাবে এবং এরশাদ আদৌ ইহলোকে থাকবেন কি না, জানার আগেই অনেকের মৃত্যু হবে। মিশেল ওবামা গদির জন্য লড়বেন কি না, এ প্রশ্নে ‘একমাত্র মৃত্যুই গ্যারান্টি’ বলে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ক্ষমতার খাইখাইদের মধ্যে মৃত্যুচিন্তা উধাও বলেই অনির্বাচিত পার্লামেন্ট, কিন্তু কোনো পার্লামেন্টই কাউকে মৃত্যুঞ্জয়ী করে না। অনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রধান অংশীদার চেয়ারম্যান, সৃষ্টিকর্তার কাছে ভ্রষ্টাচারের কী জবাব দেবেন, সেটাই ভাবছি।
চেয়ারম্যানের জীবনবৃত্তান্তে এমন কিছু বাকি নেই, যার জন্য আর আফসোস থাকা উচিত ছিল। একজন মানুষ কত খেতে পারে? মৃত্যু ছাড়া আর কে মৃত্যুঞ্জয়ী? তিনি রাজি না হলে, অনির্বাচিত পার্লামেন্ট গঠন কার সাধ্য? সুজাতা সিংকে অবশ্যই বলতে পারতেন- ‘স্যরি’। তখনকার আন্দোলনে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী তিনিও। বার্ন ইউনিটেরও অন্যতম ভাগীদারের দায় এড়াতে পারবেন না। কারাগারে তিন গুণ বেশি বন্দীর মানবেতর অবস্থার অভিশাপ থেকেও মুক্তি নেই। জাতীয়তাবাদী আদর্শের বিশাল জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করতে ২৫-৩০ বছর তো লাগবেই, যেমন লেগেছে ইরাকে। এই নির্মূল করার প্রতিক্রিয়া থেকেই ‘আইসলের’ অভ্যুত্থান রাকায়। ২০৪১ সালের মহাপরিকল্পনা পূর্ণ করতে হলে, কতগুলো ‘রাকা’র সৃষ্টি হতে পারে, বলা যাচ্ছে না। তবে অষ্টম জনবহুল দেশে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা। ইউরোপের অর্ধেক দেশের সমপরিমাণ জনসংখ্যা। ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগে ভবিষ্যতে এই দেশে অনেক কিছুই ঘটতে পারে, তা অস্বীকারের কোনোই কারণ ছিল না। ১১১ এবং ১০০ বছর বয়সে উন্নতির পার্টনার দম্পতি ২০৪১ সালে কোথায় থাকবেন, নিজেরাও জানেন। চেয়ারম্যানের কারণেই বহুদলীয় গণতন্ত্র, ’৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রে পা রাখল। অসৎ সঙ্গে পড়ে নিজের লেগেসিকে ধ্বংস করার মানে হয়?

জাতীয় পার্টির নতুন নাটক নিয়ে আমার ন্যূনতম সন্দেহ নেই। সব উপসর্গই বলছে, জাতীয় পার্টিই আসল বিরোধী দল হওয়ার পথে। এই লক্ষ্যেই সরকার থেকে বেরিয়ে আসার ভুয়া বাকযুদ্ধ। মহাজোটের বডিল্যাঙ্গুয়েজে মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছেন বেগম নম্বর তিন। এ জন্য দেশ ও মানুষ কী মূল্য দেবে, পরকালের চিন্তা দম্পতির মাথায় নেই। অথচ ব্যক্তি এরশাদ একজন ধর্মভীরু মুসলমান হিসেবেই নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন বহুবার। তার আগে রাষ্ট্রধর্ম করার সাহস আর কেউ করেননি। আটরশি পীরেরও মুরিদ, রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তাই নিয়মিত যেতেন ফরিদপুরে। তার ‘ধর্মভীরুতার’ কার্যক্রম তখন পত্রিকায় ছাপা হতো। তাহলে কেন এই কেলেঙ্কারি? তিনি জানেন, ৫ জানুয়ারি কেন অবৈধ। কেন ‘আসল’ বিরোধী দলের বদলে প্রয়োজন কার্যকর বিরোধী দল। কেন ২০ দলের বিরুদ্ধে খানবাহাদুর-রায়বাহাদুরদের সরব যুদ্ধ। মিথ্যা মিথ্যাই এবং মিথ্যার শাস্তি হবেই। চেয়ারম্যানকে ঘিরে আছে অসংখ্য বিষাক্ত প্রাণী, দুর্নীতিবাজ, লোভী, দুর্বৃত্ত, চোর-বাটপাড়েরা; মানবতার শত্র“ তারা, ক্ষমতার খাইখাই ছাড়া কিছুই বোঝে না। ‘যে পাপ করে, তার চেয়ে অধিক শাস্তি পাবে পাপীকে যে সমর্থন করে।’ বুড়ো বয়সে নতুন ষড়যন্ত্রে না জড়িয়ে উচিত ছিল, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। এখন বকধার্মিক জানেন, ৫ জানুয়ারি কত বড় পাপের বোঝা এবং পাপের শাস্তি হবেই। মধ্যবর্তী নির্বাচনে চোর-বাটপাড়দের পকেট ভারী হবে, কিন্তু ১১১ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত থাকলে, আমিও লেখা ছেড়ে দেবো।
৫ জানুয়ারিকে ‘হ্যাঁ’ বলাটা ভ্রষ্টাচার। সারা জীবনই বড় পদে থেকেছেন, ভালো কাজও করেছেন, গত ৪৪ বছরে একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনের জন্য বিশেষ দূত এবং কয়েকটি মন্ত্রীর পদ তুচ্ছ। চাইলে ’৯০-এ মুগাবের মতোই ক্ষমতা দখলে রাখতে পারতেন হয়তো। অথচ নিজের হাতেই কবর দিলেন লেগেসি? একটি লেগেসির জন্য মানুষ কত পরিশ্রম করে! ইরান ও কিউবার সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করাই ওবামার লেগেসি। ম্যান্ডেলা স্বেচ্ছায় একটানা ২৭ বছর জেল খেটেছিলেন কি নিজের পরিবারের জন্য? মন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে বলিভিয়ানদের মুক্তির জন্য গেরিলা অপারেশনে গিয়ে নিহত, চে গুয়েভারা কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কাজটি করেছিলেন? এত বছর পরও তাদের লেগেসি মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা। কারো উপকার করলে চোখে পানি আসে। কিন্তু ১০০টা খুন করলেও চোখ থাকে শুকনো। কেন?
প্রত্যেকের কাছেই কিছু না কিছু শেখার থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা আত্মজীবনী লেখেন না। লিখবেন কোন সাহসে? পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, বেশির ভাগই নানা অপরাধে অপরাধী। কেউ লিখলে, বই নিষিদ্ধ করে উত্তরসূরিরা, সংসদে গালিগালাজের বোমাবর্ষণ। এমনকি পাশের দেশের রাজনীতিবিদেরাও আত্মজীবনী লিখে যাচ্ছেন। পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের ৯৯ শতাংশই বই লেখেন। সুজাতা সিংয়ের কলঙ্কে কলঙ্কিত না হলে, রাষ্ট্রনায়ক এরশাদের বর্ণাঢ্য আত্মজীবনীও হতে পারত নতুন প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আরেকটি ৭ মার্চের প্রয়োজন হলে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হতো, নব্য উপনিবেশবাদীদের কুঠিবাড়ির নিয়মিত অতিথি চেয়ারম্যান সেটা জানেন। তাকে কেন্দ্রবিন্দু করে ঢাকা-দিল্লির দরকষাকষি বোঝার জন্য কারো আত্মজীবনীর প্রয়োজন না হলেও, সালমান খুরশিদের আত্মজীবনী ৫ জানুয়ারি ষড়যন্ত্রের আরেক কেতাব। সুজাতা-পঙ্কজ গংয়ের কর্মকাণ্ডেও মহামারী। আবার হঠাৎ করেই প্রধান বিচারপতির কুরুক্ষেত্র বক্তব্য, এস কে সিনহার বিরুদ্ধে বিচারপতি মানিকের অনক্যামেরা দেশদ্রোহিতার অভিযোগ (‘এস কে সিনহা শান্তি কমিটির সদস্য এবং সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন’), রওশন বনাম এরশাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই... পিপলস পার্লামেন্ট আর হচ্ছে না। যে দিন এরশাদ মাথায় বন্দুক রেখে বললেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন না,... সাথে সাথে কি উড়ে আসেননি সুজাতা সিং?
মহামতি আলেকজান্ডারের একটি গল্প। মৃত্যুশয্যায় জেনারেলকে তার তিনটি কথা। শবযাত্রা পথে হীরা-মণি-মানিক্য বিছানো থাকবে, দুই হাত থাকবে কবরের বাইরে, ডাক্তারেরা মৃতদেহ বহন করবে। জেনারেলের প্রশ্নের উত্তরে, মানুষ দেখুক, যে বিশ্বজয়ী সারা জীবন ব্যয় করল রতœভাণ্ডার লুটপাটে, সে শূন্য হাতেই চলে যাচ্ছে, ডাক্তারেরাও মৃত্যুকে সারিয়ে তুলতে পারে না। কিন্তু আশপাশের অ্যান্টি-মানুষের কারণে এরশাদের পাগলের অবস্থা। পার্টির লোকেরা মলমূত্রের চোখে দেখে, বিশেষ করে রওশন এরশাদ গং। মৃত্যুচিন্তা মাথায় রেখে দুষ্ট ব্যক্তিদের এখনই বিনাশ না করলে, পরকালে সম্ভব? পার্টির ক্ষমতা এরশাদের হাতে। সুতরাং রওশন আর বাবলুদের অবিলম্বে নস্যাৎ করতে সত্যের পথে আসা উচিত।
তবে স্বীকার করতেই হবে, নির্বাচনে রাখতে সরাসরি জামায়াতের ভয় দেখানো হয়েছিল। অন্যথায় তার জীবন সংশয়। সিএমএইচে নিয়ে গওহর রিজভী গংদের উদ্ভট আচরণ পত্রিকায়। সুজাতা সিংয়ের ধমক, ‘...তুমি যদি নির্বাচনে রাজি না হও, জামায়াত ক্ষমতায় আসবে, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল, এই দেশ সন্ত্রাসে ভরে যাবে, তুমি কি তাই চাও?’ এরশাদের উচিত, অবিলম্বে চোর-বাটপাড়দের মুখোশ উন্মোচন। লেগেসির সময় শেষ হয়নি। পদত্যাগ করে পাপের গোমর ফাঁস করলে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চেয়ারম্যানের নাম। অন্যথায় নির্বাচন নিয়ে আবারো তেলেসমাতি হলে, মানুষের মৃত্যুর দায় তার ঘাড়েই।
অসংখ্য দায়মুক্তির শৃঙ্খলে জর্জরিত উন্নতির অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি, পাপেরও অংশীদার। এরশাদ জানেন, ফাঁপা উন্নতি নিয়ে কী ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশীরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে কী আদায় করছে! ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল কাদের স্বার্থে! ২৪ তারিখে প্রথম আলোতে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত রিপোর্ট দুটো অর্থনীতির ভয়াবহ মানচিত্র। উপনিবেশকেন্দ্রিক উন্নতি মানুষের কাজ হলে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকান। ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি মহামারী আকারে। যদি দায়মুক্তি পাওয়া তৃতীয় শ্রেণীর রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে বিস্ফোরণ ঘটে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, পরকালে কী জবাব? দায়মুক্তি পাওয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন ছারখার হবে অনেকে বলেন? জুডিশিয়াল কিলিংয়ের দায় এরশাদের ঘাড়েও। মহাজোটের ক্ষয়রোগে প্রতিদিনই মরছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা। দায়মুক্তির বদলে পাপমুক্তির সময় এখন।
বাল্মীকি মুনির একটি গল্প দিয়ে শেষ করছি। দস্যু রত্নাকরকে ছদ্মবেশী ঈশ্বর নারদ বললেন, মানুষ হত্যা করে সম্পদ লুটে নিচ্ছো, তোমার পরিবার কি এর দায়িত্ব নেবে? ডাকাতের উত্তর, কেন নেবে না? ‘তুমি আমাদের খাওয়াবে-পরাবে, পাপের ভাগী হবো কোন দুঃখে?’ -উত্তর দিলো তার স্ত্রী। এর পরই ডাকাত রত্নাকর হলেন, ‘রামায়ণ’ লেখক- বাল্মীকি মুনি। আপসহীনের মৃত্যুতে যে গৌরব, বিশেষ দূত হওয়ার মধ্যে তা নেই। সত্য বললে হয়তো ম্যান্ডেলার লেগেসি হতে পারে, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী? ম্যান্ডেলার মতো ইটভাঙা নয়, বরং জেলে ডিভিশন পাবেন। সুতরাং নির্ভয়ে সত্যের পথে আসার সব কারণই তার জন্য তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যানকে মানবিক নিবেদন- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ’৯০-এর লেগেসি মাথায় রেখে আবারো সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ান।
ই-মেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com

No comments

Powered by Blogger.