অসহনীয় কষ্টে আছেন বাংলাদেশের ‌'বৃক্ষ-মানব'

শুরু হয়েছিলো আচিলের মতো।
তারপর গত ১০ বছরে এই অবস্থা
বাংলাদেশে এই প্রথম ‘বৃক্ষ মানব’ নামে পরিচিত বিরল এক রোগে আক্রান্ত একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। অসহনীয় কষ্টে থাকা এই রোগীকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
আবুল বাজানদার নামের ২৫ বছরের এই যুবক গত প্রায় এক দশক যাবত এই রোগে ভুগছেন। এর ফলে তার দুই হাত এবং পায়ের কিছু অংশ বিকৃত হয়ে অনেকটা গাছের শেকড়ের মতো রূপ নিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মায়ের পাশে বসে কথা বলছিলেন আবুল বাজানদার।
তার হাত দুটো কোলের ওপর রাখা, হাতের কব্জি থেকে বাকি অংশ বিকৃত হয়ে এমন রূপ নিয়েছে যে শুধুমাত্র হাত দুটো দেখলে সেটিকে বরং কোনো গাছের শেকড় বলে মনে হতে পারে।
দুই পায়ের পাতার কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই প্রথম কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলো, বিরল এই রোগের নাম বৃক্ষ মানব।
আবুল বাজানদার ভ্যান চালাতেন। কিন্তু এই রোগের কারণে গত ৬ বছর যাবত কোন কাজই করতে পারছেন না।
“প্রথমে ছোট ছোট আচুলি (আঁচিল) হইছিল। এরপর থেকে আমি গ্রামের ডাক্তার দেখাইছি, খুলনায় দেখাইছি, কলকাতায় দেখাইছি। কিন্তু অসুখ বাড়া ছাড়া কমেনি। এখন ডাক্তার বলছে অপারেশন করা লাগবে,” বলেন তিনি।
আবুল বাজানদারের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছায়।
রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১০ বছর যাবত হোমিওপ্যাথিসহ নানা চিকিৎসা করিয়েছেন। ভারতেও গিয়েছিলেন বছর পাঁচেক আগে।
চিকিৎসকেরা সেখানে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলেও অর্থের অভাবে সেটি আর করা হয়নি।
সর্বশেষ একজন সাংবাদিকের সহায়তায় খুলনার একটি হাসপাতালে তাকে নেয়া হয়।
মা আমেনা বেগমের সাথে আবুল বাজানদার
ঐ হাসপাতালের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আসার পরামর্শ দেন।
বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ড. সামন্ত লাল সেন বলছেন, তারা এখন একটি মেডিকেল বোর্ড তৈরি করবেন এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই রোগীর হাত কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।
মি. সেন বলেন, “এটিকে বলে এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস। একধরণের ভাইরাস থেকে এসেছে। আমাদের প্রথম ইম্প্রেশন হচ্ছে, রোগীর হাতটা ঠিক করতে হবে। এরপর আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।”
ড. সেন বলছেন, তার জানামতে এপর্যন্ত বিশ্বে এর আগে মাত্র দু’জন রোগীর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড আছে।
এদের একজন ইন্দোনেশিয়ায় এবং অপরজন রোমানিয়ার।
আবুল বাজানদারের মা আমেনা বেগম বলছেন, তার ছেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সামাজিকভাবে তিনি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।
“কেউ কেউ বলে খারাপ লাগে না, পাশে এসে বসে। আবার কেউ কেউ একটু দূরে দূরে থাকে।”
আমেনা বেগম বলেছেন, বিভিন্নজনের থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে এতদিন ছেলের কিছু চিকিৎসা চালিয়ে এসেছেন।
আট ভাই-বোনের পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান আবুল বাজানদার বছর পাঁচেক আগে বিয়ে করেছেন। এখন তিনি তিন বছরের এক কন্যা সন্তানের বাবা।
আবুল বাজানদার বলেন, “আমি মেয়েকে বলি কি হয়েছে, সে বুঝতে পারে না। আমার কোলে আসে, মুখে তুলে খাওয়ায়।”
ড. সেন বলছেন, তারা মি. বাজানদারের থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। তবে শেষপর্যন্ত এই চিকিৎসা কতটা ব্যয়বহুল হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সূত্র : বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.