বিরল রোগ, শিকড়ের মতো হয়ে যাচ্ছে হাত-পা by উত্তম মণ্ডল

দুই হাতের তালুর চামড়া এবং ১০টি আঙুল প্রসারিত হয়ে অনেকটাই গাছের শিকড়ের মতো আকার নিয়েছে। পায়ের আঙুল আর তালুতেও একই অবস্থা। হাত ও পায়ের নখগুলো হারিয়ে গেছে সেই ‘শিকড়ে’র ভেতর।
এমন ‘শিকড়’ গজিয়েছে ২৫ বছর বয়সী যুবক আবুল বাজনদারের হাত ও পায়ে। তাঁর বাড়ি খুলনার পাইকগাছা সদরের সরল গ্রামে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি বিরল রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি ‘এপিডার্মোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ নামে পরিচিত। জিনগত এবং একধরনের ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
গত ২৩ ডিসেম্বর খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে আবুল চিকিৎসা নিতে যান। আবুলের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বঙ্গ কমল বসু।
গত বৃহস্পতিবার বঙ্গ কমল বসু প্রথম আলোকে বলেন, আবুলের রোগটি বিরল। এর নাম এপিডার্মোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস। জিনগত এবং একধরনের ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। তিনি জানান, ২৪ জানুয়ারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আবুলের রোগ নিয়ে একটি বোর্ড বসান। সেখান থেকেই তাঁকে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট খুপরি ঘরে তিনি শুয়ে আছেন। পাশে বিষণ্ন হয়ে বসে আছেন মা আমেনা বেগম ও বাবা মানিক বাজনদার।
কাঁদতে কাঁদতে আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন আবুল। অনেক চিকিৎসককে দেখালেও ভালো হয়নি, বরং অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
রোগটি সূত্রপাতের কথা জানিয়ে মানিক বাজনদার বলেন, আবুলের বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তার ডান হাঁটুর নিচে আঁচিলের মতো একধরনের গোটা উঠতে থাকে। পরে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত এবং দুই পায়ের হাঁটু পর্যন্ত আঁচিলে ভরে যায়। খুলনায় হোমিও চিকিৎসাও করান তাঁরা। কিন্তু শিকড় গজানো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় আবুলকে। সেখানকার চিকিৎসকেরা একপর্যায়ে তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসা নিতে বলেন। বাবা বলেন, অভাবের সংসারে দ্বারে দ্বারে ঘুরে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে টাকা তুলে দুই দফায় ভারতের কলকাতায় চিকিৎসাও করানো হয়েছে আবুলের।
হাত ও পায়ে গজানো শিকড়কে খুব ভারী মনে হয় আবুলের। তিনি বলেন, এগুলো থেকে মাঝে মাঝে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়। খাওয়া থেকে শুরু করে কোনো কাজই তিনি নিজে করতে পারেন না।
আট ভাইবোনের মধ্যে আবুল ষষ্ঠ। ২০১১ সালে গড়ইখালী গ্রামের হালিমা খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের তিন বছরের একটি শিশুকন্যা আছে।

No comments

Powered by Blogger.