কোকেন কাণ্ড - মুখ খুলছে না নুর মোহাম্মদ by মহিউদ্দিন জুয়েল

চট্টগ্রামের কোকেন কাণ্ডের ঘটনায় মুখ খুলছে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক সেই নুর মোহাম্মদ। ভোজ্য তেলের আড়ালে অতীতে কখনো কোকেন আনা হয়েছে কিনা তা জানতে এখন উদগ্রীব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন লন্ডনে বসে কোকেন পাঠানো ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, নুর মোহাম্মদ প্রকৃত ঘটনা থেকে আড়াল থাকতে চাইছেন। প্রথম দফায় চার্জশিটে তার নাম বাদ দেয়ার পর পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ঘটনার পর যদিও সে প্রথম থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনার জন্য তার ম্যানেজার সোহেলকে দায়ী করছেন।
তার কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় আদালতে দ্বিতীয় দফায় তার রিমান্ড চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে তিন দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব তাকে দ্বিতীয় দফায় আদালতে হাজির করেছিল। এই সময় মহানগর হাকিম রহমত আলীর আদালতে হাজির করে আরও তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানির জন্য আদালত আজ সোমবার দিন ঠিক করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনানের। তিনি বলেন, র‌্যাব তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়েছে। আদালত আজ এই বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি।
চট্টগ্রাম বন্দরে তেলের ড্রামে কোকেন পাওয়ার ঘটনায় চলতি বছরের গত ২৮শে জুন বন্দর থানার এসআই ওসমান গণি বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। সানফ্লাওয়ার তেল ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১০৭টি কনটেইনারের একটিতে গত ২৭শে জুন তরল কোকেনের অস্তিত্ব মিলে।
ঢাকার বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর তারা কোকেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৮ই জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও নৌবাহিনীর ল্যাবের প্রাথমিক পরীক্ষায় কোনো তরল কোকেন না থাকার কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে মূল হোতা যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া এখনও পলাতক রয়েছে। তারা আদৌ সেখানে অবস্থান করছেন কিনা তা জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে ঘটনার ৭ মাস পর র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় নুর মোহাম্মদকে।
তবে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার এখনও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি গোয়েন্দারা। গত বছরের ১৯কে নভেম্বর এই সংক্রান্ত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, যে চালানটি ধরা পড়েছিল তার গন্তব্য ছিল ভারতে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তা আদালতে দাখিল করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান।
এতে তিনি যাদের আসামি করেন তাদের মধ্যে ছিলেই গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, মোস্তফা কামাল, আমদানিকারক সূর্যমুখী তেলের প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, লন্ডনে বসবাসরত নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া অন্যতম আসামি গোলাম মোস্তফা সোহেলের আত্মীয়। সোহেল জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তাদের মাধ্যমেই তিনি ভোজ্য তেল নিয়ে আসতেন বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে এই কাজে মালিক নূর মোহাম্মদকে তিনি বিষয়টি অবহিত করতেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আসামি সোহেল রিমান্ডে বলেছিলেন, লন্ডন থেকে বলিভিয়া হয়ে এসব চালান দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে পৌঁছে দিতো। প্রতিটি চালানেই খান জাহান আলী লিমিটেডের নাম ছিল আমদানিকারক হিসেবে। এই ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান বলিভিয়ার ‘ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ইএল ভাইভেন এসআরএল’ ও উরুগুয়ের ‘সাউথ ফ্রেইট লজিস্টিক নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে সে স্বীকার করেছে।

No comments

Powered by Blogger.