বিশ্বনাথের রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ by ওয়েছ খছরু

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিশ্বনাথের সংবর্ধনা নিয়ে ‘কৌতূহল’ দেখা দিয়েছে। বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জের রাজনীতিতে চলছে নানা গুঞ্জনও। আর এই সংবর্ধনার পর মনে করা হচ্ছে বালাগঞ্জের পর সিলেটের বিশ্বনাথেও আরেক রাজনীতিবিদ মুহিবুর রহমান রাজনৈতিক জোট বাঁধলেন আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে। এতে করে বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিভক্তও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগের রাজনীতির একক নেতা হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীরা মানেন। ওই তিনটি এলাকা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী আসনেও সংসদ সদস্য ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। গেলো বছর জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট বাধার কারণে সিলেটের ওই নির্বাচনী আসনটি জাতীয় পার্টিকেই ছাড় দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। ফলে শফিকুর রহমান চৌধুরী দলীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে দেন। তবে, বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে স্বস্তিতে ছিলেন না শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যান ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা এলাকার সন্তান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে এলাকায় নিজের বলয় গড়ে তোলেছেন। এখন ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে গেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ওসমানীনগরের শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিরোধী বলয়কে নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ করেছেন। ফলে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে তার অবস্থান অনেকটা সুসংহত হয়ে গেছে। এ কারণে নিজ উপজেলা ছেড়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখন কাজ শুরু করেছেন বিশ্বনাথে। আর তার এই কাজের শরিক করছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমানকে। মুহিবুর রহমানের কাঁধে ভর দিয়ে বুধবার বিকালে বিশ্বনাথে পা রাখলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ দিন বিশ্বনাথে মুহিবুর রহমানের উদ্যোগে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দেওয়া হয় গণ-সংবর্ধনা। এই বিশ্বনাথের সন্তান হচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। এই সংবধনা অনুষ্টানে শফিকুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় রাজনীতিতেও শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে বনিবনা নেই মুহিবুর রহমানেও। এছাড়া, গেলো সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় সিদ্বান্ত না মেনে মহাজোট মনোনিত জাতীয়পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচনে পরাজয় বরণের পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসে ছিলেন মুহিবুর রহমান চৌধুরী। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর গণ-সংবর্ধনার মাধ্যমে মুহিবুর রহমানও বিশ্বনাথের রাজনীতিতে নতুন করে নিজের জানান দিলেন। আর বিশ্বনাথে আয়োজিত ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ কারনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর নিজ এলাকা বিশ্বনাথে আনোরুজ্জামান চৌধুরীর গণ-সংবর্ধনাকে ঘিরে কৌতূহল বিরাজ করছে। আর এই সংবর্ধনার পর থেকে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বলয়টি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিরোধী জোটে একত্রিত হতে চলেছেন বলে রাজনীতিতে সুর উঠেছে। বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল অনেক নেতাই এই গণ-সংবর্ধনাকে আমলে নিচ্ছেন না। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ চলছে ‘চেইন অব কমান্ডে’। এলাকার যেসব কর্মসূচিতে জেলা নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকবে সেখানে দলের নেতারা থাকবে। অন্যথায় কারও একক অনুষ্ঠান দলের মূল গতিকে বিঘ্নিত করবে না। এদিকে বুধবার বিশ্বনাথের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর গণ-সংবর্ধনায় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেছেন, ‘এলাকার উন্নয়নে আনোয়ারুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীতে আরোও দক্ষতার সঙ্গে তিনি এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমরা বিশ্বাসী।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় এমপি ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি পূরণে মানুষের আস্থার প্রয়োজন। আর সেই আস্থা রাখার একজন যোগ্য নেতা হচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান।’ সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের জন্য বিরোধীদলীয় এমপিকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। এলাকার মানুষের জন্য কি করলাম-কি করলাম না সেটা দেখার দরকার। আমি এমপি হলাম কিনা সেটা দেখার দরকার নেই।’ বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বলেন, আগামী দিনের একজন যোগ্য নেতা আনোয়ারুজ্জামানকে আমি আপনাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতেই যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছি। উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে একদিন আত্মার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর বলেছেন, সুবিধাভোগীরাও আজ মুজিব কোট পরে। এরা খন্দকার মোস্তাকের দুসর এদের উৎখাত করতে হবে। গৃহকর্মীর হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.