জর্ডানে স্বপ্নভঙ্গ নাজমা-হেনার by দীন ইসলাম

রঙিন স্বপ্ন পূরণের আশায় জর্ডান গিয়েছিলেন নাজমা ও হাসনা হেনা। কিন্তু ওই আশায় গুড়েবালি পড়ে সেখানে যাওয়ার পর। দেশটিতে যাওয়ার পর শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন তারা। এদের মধ্যে একজনের চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যজন পরিবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ দুই জনের পরিবার ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। বিষয়টি জানিয়ে গত ৪ঠা জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছেন র‌্যাবের পরিচালক (অপারেশনস উইং)। চিঠি’র কপি পররাষ্ট্র সচিব এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেয়া হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ফকিরাপুলের এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. মকবুল হোসেন অনেক দিন ধরেই এভাবে নারী শ্রমিকদের জর্ডানসহ কয়েকটি দেশে পাঠিয়ে আসছেন। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জের নাজমাকে গেল বছরের ২১শে জুলাই জর্ডানে একটি হাসপাতালে চাকরি দেয়ার কথা বলে ওই দেশে পাঠান। কিন্তু জর্ডানে নাজমা পৌঁছার পর তার আত্মীয়স্বজনকে ফোন মারফত জানান, তাকে একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে এবং সেখানে তাকে অশ্লীল কাজের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বিষয়টি জানিয়ে নাজমার পরিবারের পক্ষ থেকে এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই ট্রাভেল এজেন্সিতে যাওয়ার পর নাজমার আত্মীয়স্বজনদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর র‌্যাবকে বিষয়টি সম্পর্কে জানায় তার আত্মীয়রা। র‌্যাবকে তার পরিবার জানায়, বর্তমানে জর্ডানে বসবাসরত নাজমার কোনো খোঁজখবর মিলছে না। এছাড়া, গাজীপুরের হাসনা হেনা ২০১৫ সালের ১৮ই মার্চ একই এজেন্সির মাধ্যমে জর্ডান যান। তাকেও হাসপাতালে চাকরির কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। জর্ডানে পৌঁছার পর হাসনা হেনা ফোন করে তার পরিবারের সদস্যদের জানান, তার উপর শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে এবং একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার চোখে আঘাত করার কারণে চোখটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাসনা হেনার দুর্দশার কথা জানার পর তার পরিবারের লোকজন এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফিরিয়ে আনতে চাইলে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। এজেন্সির কথামতো সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়ার পর হাসনা হেনাকে ফিরিয়ে আনা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ দুই জনের অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব ফকিরাপুলের এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। অভিযানে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ আটজনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ১১৩৬টি মহিলাদের পাসপোর্ট, ২১৪টি ভিসা ফরম, ১১৩৫টি ট্রেনিং সার্টিফিকেট, ২২টি মোবাইল এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকাসহ আরও বিভিন্ন জিনিস জব্দ করা হয়। র‌্যাব তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রতারণামূলকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে বিদেশে মহিলা গৃহকর্মী পাঠানোর নামে তাদের জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আট জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.