উ. কোরিয়ার ঘোষণায় হুমকিতে বিশ্ব

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন হাইড্রোজেন বোমা
পরীক্ষার নথিতে সই করছেন। ছবিটি গতকাল
প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ। এএফপি
হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করল উত্তর কোরিয়া। তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির এ দাবির সত্যতা যাচাই করা অসম্ভব। তবে যা সম্ভব হয়েছে তা হলো, কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে, ফেলে দিয়েছে দুশ্চিন্তায়। এর মধ্যে রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের মিত্র চীনও। শক্তিশালী পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের দৃশ্যত এ ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে অপ্রত্যাশিত হলেও ‘ভ্রমগ্রস্ত’ একজন স্বৈরশাসক তা ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, চতুর্থ পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করা নিয়ে গতকাল বুধবার উত্তর কোরিয়ার ঘোষণায় বিশ্ববাসীর কতটুকুইবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ রয়েছে? এককথায় যথেষ্ট, বলছিলেন সর্বাত্মক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি-বিষয়ক সংগঠনের প্রধান লাসিনা জারবো। বলেন, ‘এ ঘোষণা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট হুমকি।’ প্রধান পরীক্ষাস্থল পুংগে-রিতে উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমা ফাটানোর যে বর্ণনা পাওয়া গেছে, তা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে জারবোর এ সতর্কতা অমূলক নয় বলে বলছেন বিশ্লেষকেরা। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, যে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেটা ক্ষুদ্র ও হালকা সংস্করণের হাইড্রোজেন বোমা। আগের তিনটি পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা থেকে এবারের বিস্ফোরণ উল্লেখযোগ্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার একটি কারণ হাইড্রোজেন বোমা অন্যান্য পরমাণু বোমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক।
আবার প্রথম পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালানোর এক দশক পর হাইড্রোজেন বোমার এই পরীক্ষায় এ আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে মূল ভূখণ্ডে হামলার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র প্রযুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে উত্তর কোরিয়া। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সফলভাবে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার উত্তর কোরিয়ার ওই দাবি যাচাই করা অসম্ভব। এরই মধ্যে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, দেশটি প্রকৃতপক্ষে ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নিজ সামরিক সক্ষমতা ফাঁপিয়ে দেখানো দেশের বাইরে উত্তর কোরিয়াও নয়। কিন্তু উত্তর কোরিয়াকে নিরাপত্তা পরিষদের অবরোধ ও দেশটিকে একঘরে করার মার্কিন চেষ্টা সত্ত্বেও কার্যত পিয়ংইয়ং তার পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিকে অগ্রগতিমূলক ধাপে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের ইয়োনসেই ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জন ডিলিউরির মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শেষ কটি মাসে পিয়ংইয়ংকে ঘিরে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রশস্ত্র-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের ওপর মনোযোগ দিচ্ছেন। কেননা, এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের অবরোধ আরোপ ও দেশটিকে একঘরে করার মার্কিন চেষ্টা উভয়ই কানাগলিতে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ওই পরীক্ষা চালানোর ঘোষণায় উত্তর কোরিয়ার প্রতি সতর্কবার্তা উচ্চারণের পুনরাবৃত্তিই করেছে। বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন মানার বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে। আরও বলেছে, তারা পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে মানবে না।

No comments

Powered by Blogger.