ভারত, চীনের সঙ্গে সমান সম্পর্কে ‘সুফল’ বেশি: লঙ্কান দূত

ভারত ও চীনের সঙ্গে সমান সম্পর্ক রক্ষা করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশ বেশি সুফল পেতে পারে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত লঙ্কান হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকেরা। বলেন, ইন্ডিয়া ও চায়নার মতো বিশাল অর্থনীতির দু’টি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি এখানেই আমাদের দুই দেশের (বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা) উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ দু’টি দেশ কেবল এশিয়ায় নয়, বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার হিসাবে নিজেদের আসন করে নিয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার জানান. কোন একটি দেশের প্রতি না ঝুঁকে শ্রীলঙ্কা সব সময় দুই দেশের সঙ্গে ‘ভ্যালেন্স রিলেশন’ রাখার চেষ্টা করে। গতকাল কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন (ডিকাব)-এর মতবিনিময় বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ডিকাব-টক এ সংগঠনের সভাপতি মাসুদ করিম সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বশির আহমদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। হাইকমিশনার তার নির্ধারিত বিষয়ে দীর্ঘ বক্তৃতার পর উন্মুক্ত সেশনে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সেখানে কূটনৈতিক রিপোর্টাররা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ডিকাবের সঙ্গে লঙ্কান কোন হাইকমিশনারের প্রথম এমন আনুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে ইয়াসোজা গুনাসেকেরা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে একই পরিবারের দুই সদস্য বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার দেশে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দুই দেশের নানামুখি সম্ভাবনা, বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এখন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যা সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। বাণিজ্য সম্ভাবনা আরো দৃঢ় করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ সইয়ে তার দেশের প্রস্তুতির কথাও জানান হাইকমিশনার। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সামপ্রতিক একটি বক্তব্যের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে চুক্তিটি সইয়ে দুই পক্ষই সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছে বলে জানান তিনি। লঙ্কার দূত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘কাছাকাছি’ মন্তব্য করে দুইদেশের উষ্ণ সম্পর্কের বিষয়টি স্মরণ করেন। তার দেশের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মত দেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ আকর্ষণে তার দেশ বিভিন্নমুখী উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে হাইকমিশনার জানান, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস, পর্যটন এবং পর্যটন সম্পর্কিত বিভিন্ন খাত, অবকাঠামো, উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষি, ওষুধসহ অন্তত ১০টি খাতে লঙ্কায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তিনি স্কয়ার ও বেক্সিমকোর মতো প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এমন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে তারা সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন। লঙ্কান বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি বৈষম্য কমাতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকার এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান সম্পর্ক, বাণিজ্য ও সম্ভাবনাকে আরও জোরদারে ‘বঙ্গোপসাগর’কেন্দ্রিক যোগায়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম পোর্টের সঙ্গে লঙ্কার হাম্বানটোটা পোর্টের সংযোগ এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ট্রেডিশনাল লিঙ্কগুলো রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ব্যবসা. বাণিজ্য তেমন একটা নেই। যা আছে তা সম্ভাবনার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। বাণিজ্য বাড়াতে বন্দর ও নৌ-রুটের সম্ভাবনাকে কিভাবে আরও বেশি কাজে লাগানো যায় বিশেষত যৌথ প্রডাকশন এবং যৌথ বিনিয়োগে উভয়ের উন্নতি নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার তাগিদ দেন হাইকমিশনার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার দেশের বর্তমান ঐকমত্যের সরকার দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা সংকট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পেরেছে। তার দেশে এখন শান্তি, ঐক্য ও সংহতি ফিরে এসেছে। এ সময় ভারত ও নেপালের সম্পর্কের টানাপড়েন প্রশ্নে কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে বিরত থাকেন লঙ্কান দূত। তবে তিনি নেপালেন সংবিধান প্রণয়ণের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের সমাপনীতে ডিকাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অতিথিকে নিয়ে সংগঠনের বার্ষিক প্রকাশনা ‘বিয়ন্ড দ্য বাউন্ডারি-২০১৫’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন।

No comments

Powered by Blogger.