রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন by হামিদ বিশ্বাস

রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ সম্পর্কিত এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি)। জানতে চেয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় কেন এতো নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। একই পরিচয়ে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের বিষয়টিও উঠে আসে। আলোচনা হয় পুঁজিবাজারে অনিয়ম, ব্যাংক-বীমাখাতে কেলেঙ্কারিসহ আর্থিক খাতের নানা ইস্যু।  আলোচনা থেকে বাদ যায়নি ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পও। এছাড়া, কিছু প্রশংসা আর জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিন পার করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় সংশ্লিষ্ট খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান-বিএসইসি, আইডিআরএ ও এমআরএ কর্ণধাররা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট অনেকে এটাকে ব্যাংক ও আর্থিকখাতের ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, আর্থিক খাতের সব অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হচ্ছে এপিজি দল। সব বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন তারা। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব খাতের নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকালের বৈঠক নিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এনিয়ে তিনি কথা বাড়াতে রাজি হননি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মানিলন্ডারিং ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে খোঁজ নিতে আসা জাতিসংঘ তথা এপিজি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তবে বেশকিছু বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা বাংলাদেশ এখনও অর্জন করতে পারেনি। তাদের অব্যাহত প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ ও এমআরএ এসব বিষয়ে জবাবদিহিতা করেছে। এসব খাতের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক, ব্যাংক পরিচালক, বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এপিজি। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ৩৭টি ব্যাংক লাইসেন্স আবেদন করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। যে ২৮টি দেয়া হয়নি সেগুলো ছিল অতি রাজনৈতিক। এছাড়া পুঁজিবাজার, বীমা ও এমআরএ নিয়ে করা প্রশ্নেরও জবাব দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, এপিজির বিষয়ে এখনও কথা বলার সময় আসেনি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, রুটিন কাজ। আগামী ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওই মূল্যায়ন দলটি বাংলাদেশ সফর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসে তারা শেষ মুহূর্তে একটি সারসংক্ষেপ দিতে পারে। তখনই বলা যাবে- উন্নতি হলো নাকি অবনতি। এর আগে গত   রোববার ও সোমবার ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও পাচার রোধে ৪০টি সুপারিশ করে এপিজি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিএফআইইউ-সিআইডি ও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের  সঙ্গে বৈঠকে এপিজির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সুপারিশ করে। এ সময় এপিজি দুদকের কাছে বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে। জবাবে দুদক ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি রোধ ও অর্থ পাচার রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে। একই দিন সচিবালয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন এপিজির প্রতিনিধি দল। এতে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.