ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের মুখে ইসরাইল চলে গেলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি

ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি মঙ্গলবার বিক্ষোভের মুখে স্কুল উদ্বোধন না করেই ফিলিস্তিন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পূর্ব জেরুজালেমের আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন করার সময়ে শত শত ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি ছাত্র প্রণবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ভারতের সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ক্রম বর্ধমান বন্ধুত্বের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করা হয়।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের হাতে যে সব প্ল্যাকার্ড ছিল তাতে লেখা ছিল, ‘দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে কেনো সহযোগিতা করছে ভারত’, ‘ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলুন ভারতের প্রেসিডেন্ট’, ‘নির্মমভাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে চুপ থাকবেন না ভারতের প্রেসিডেন্ট।’ একই সঙ্গে বিক্ষোভরত ছাত্ররা ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বয়কট করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। পূর্ব জেরুজালেম ইসরাইলি সেনাদের হাতে ছাত্র হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে তিনি আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পক্ষ থেকে সম্মানসূচক নাইট অব পিস ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু’র নামে একটি স্কুল উদ্বোধনের কথা থাকলেও ছাত্র বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট প্রচণ্ড উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রণব মুখার্জি। পরে তিনি সড়ক পথে ইসরাইল চলে যান। ইসরাইল সফরকারী প্রথম ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি । বৃহস্পতিবার হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করবে বলে কথা রয়েছে।
ইসরাইল সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি
ভারত ও ইসরাইলের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী আজ থেকে তার ঐতিহাসিক ইসরাইল সফর শুরু করেছেন।
এই প্রথম ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতা ইসরায়েলে গেলেন, আর এই সফরে মুখার্জী সে দেশের পার্লামেন্ট নেসেটেও ভাষণ দেবেন।
এই একই সফরে একটা দিন ফিলিস্তিনকেও বরাদ্দ করে ভারত যদিও তার পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে, পর্যবেক্ষকরা বলছেন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ক্ষেত্রে ভারতের যে আর কোনো দ্বিধাই নেই রাষ্ট্রপতির সফর তারই প্রমাণ।
আরব লীগের বাইরে বিশ্বের প্রথম যে দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তারা ভারত। ফিলিস্তিনি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসের আরাফতের সঙ্গেও ভারতীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা ছিল সুবিদিত।
কিন্তু ১৯৯২তে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই প্রতিরক্ষা-কৃষি-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে জঙ্গী দমন নানা ক্ষেত্রেই দুই দেশের সহযোগিতা বেড়েছে – আর অন্যদিকে ধীরে ধীরে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে ভারত-ফিলিস্তিনের সম্পর্কে।
এ বছরের গোড়ায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতেও প্রথমবারের মতো বিরত থেকেছে ভারত। আর এমন এক পটভূমিতেই মঙ্গলবার ইসরাইলে তার সফর শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি (ইস্ট) অনিল ওয়াধওয়া-র কথায়, ‘ভারত ও ইসরাইল উভয় দেশই তাদের জন্মলগ্ন থেকে মানবসভ্যতা ও ইতিহাসে স্থায়ী দাগ রেখে গেছে। ভিন্ন পথে হলেও দুদেশের স্বাধীনতাও প্রায় একই সঙ্গে, আর তাদের দেশগঠন আর গণতন্ত্রের পথে যাত্রাও শুরু একই সময়ে। এই দুই দেশই তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ওপর ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে।’
জেরুসালেমে আজ রাষ্ট্রপতি মুখার্জী দেখা করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র সঙ্গে, কাল তার বৈঠক সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সফরে দুই দেশের মধ্যে অজস্র সমঝোতা স্বাক্ষরিত হবে বলেও কথা রয়েছে।
ইসরাইলে তিনি কাটাচ্ছেন প্রায় তিনদিন, সেখানে ফিলিস্তিনে ছিলেন মাত্র একটা দিন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বা মুখপাত্র বেণু রাজামণি বলছিলেন প্রথম কোনো ভারতীয় নেতা হিসেবে এই দেশগুলোতে এক ঐতিহাসিক সফরে যেতে পেরে রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত আনন্দিত।
‘ব্যক্তিগতভাবেও তার আগে কখনো ওই অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়া বা সে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াও হিব্রু ইউনিভার্সিটি তাকে সাম্মানিক ডক্টরেটে ভূষিত করবে’, জানান রাজামণি।
পর্যবেক্ষকরাও বলছেন রাষ্ট্রপতির এই সফর কোনো রুটিন বিদেশযাত্রা নয়, বরং ভারত-ইসরাইল সম্পর্কেই একটা পাকাপাকি সিলমোহর।

No comments

Powered by Blogger.