শিকলে বন্দী মাদ্রাসাছাত্রী

তিন মাস ধরে শিকলবন্দী লিজা। ছবি -প্রথম আলো
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার খাসের হাওলা গ্রামে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত লিজা নামের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে তিন মাস ধরে শিকলে আটকে রাখা হয়েছে।
গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, লিজার (১৯) এক পায়ে শিকল পরানো। নিজ বাড়ির সামনে পুকুরের পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশেই বসে আছেন তাঁর মা ছানিয়া বেগম। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন বড় বোন সেলিনা বেগম।
সেলিনা প্রথম আলোকে জানান, লিজা স্থানীয় একটি ফাজিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এক ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছর ওই ছেলের কাছে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ছেলেটি দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ কারণে বিয়ে হয়নি। এ ঘটনায় লিজা মানসিকভাবে খুব আঘাত পান। উল্টোপাল্টা আচরণ শুরু করেন। কয়েক মাস আগে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়। লিজা পাগলের মতো এদিক-সেদিক দৌড়ে চলে যেতে চাইতেন। এ কারণে তাঁকে শিকলে আটকে রাখা হয়।
এ সময় লিজা স্পষ্ট উচ্চারণে বলেন, ‘আমি সুস্থ। এরপরও আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।’ এরপর তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন। একটু পর আবার কথা বলবেন জানিয়ে চুপ করেন। এ সময় তাঁর মা ছানিয়া জানান, তাঁদের অভাবের সংসার। লিজার বাবা নেই। চিকিৎসা করানোর মতো টাকাও নেই। এরপরও ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে লিজার চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এত দিন তাঁর মেয়ে ভালোই ছিলেন। কিন্তু এক মাস আগে একজন কবিরাজ দেখানোর পর অবস্থা আরও খারাপ হয়।
লিজার সহপাঠী নার্গিস আক্তার (১৯) জানান, লিজা খুব নরম স্বভাবের। আঘাত পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অভাবের কারণে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না। শিকলে বাঁধা পড়েছে জীবন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা এ এস এম সায়েম বলেন, মানসিক আঘাতের কারণে এমনটি ঘটে থাকতে পারে। আটকে না রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া হলে এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.