কাল মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিনের রিভিউ আবেদন, রিভিউয়ের জন্য দুই প্রশ্ন মুজাহিদের

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবীরা
গতকাল কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সাথে সাক্ষাতের
পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন : নয়া দিগন্ত
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আজ বুধবার দায়ের করা হবে। গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তার অন্যতম আইনজীবী মো: শিশির মনির এ কথা জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পক্ষেও আজ রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফেসানী এ কথা জানিয়েছেন। গত ৬ অক্টোবর অ্যাডভোকেট আলফেসানী কাশিমপুর কারাগারে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে রিভিউ আবেদন দায়ের করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দেন।
মুজাহিদের দুই প্রশ্ন : গতকাল বেলা ৩টায় আইনজীবীদের সাক্ষাৎকালে রিভিউ আবেদন দায়ের করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
এই প্রশ্ন দু’টি হচ্ছেÑ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেরায় স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন রাজাকার, আলবদর বা শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় জনাব মুজাহিদের নাম নেই। হঠাৎ করে ৪২ বছর পর কিভাবে তিনি আলবদরের কমান্ডার হয়ে গেলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছেÑ ১৯৭১ সালে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ২৩ বছর বয়সের একজন ছাত্র ছিলেন। একজন ছাত্র কিভাবে আধা-সামরিক বাহিনীর কমান্ডার হতে পারেন? কে কখন কোথায় তাকে এই পদে নিয়োগ দিলেন এই মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো মৌখিক বা দালিলিক সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
অ্যাডভোকেট মো: শিশির মনির বলেন, তার এই প্রশ্নগুলো পুনর্বিবেচনার আবেদনে (রিভিউ পিটিশন) অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ পিটিশনটি দায়ের করা হবে। এই আইনজীবী জানান, মুজাহিদ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে করেন আপিল বিভাগ তার পুনর্বিবেচনার আবেদনটি মঞ্জুর করবেন এবং দণ্ড মওকুফ করে তাকে বেকসুর খালাস দেবেন।
গতকাল বেলা ৩টায় অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের নেতৃত্বে পাঁচজন আইনজীবী মুজাহিদের সাক্ষাতের জন্য কারাগারে প্রবেশ করেন। শিশির মনির ছাড়া অন্য চার আইনজীবী হলেন- মসিউল আলম, এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, মতিউর রহমান আকন্দ ও আসাদ উদ্দিন।
সাাৎ শেষে বিকেল ৪টার দিকে জেলগেটে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন শিশির মনির। তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন চূড়ান্ত করার ল্েয আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে সাাৎ করেছি আমরা। তিনি রিভিউ আবেদনের বিষয়ে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন এবং সবার দোয়া চেয়েছেন। বুধবার সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আমরা রিভিউ আবেদন দাখিল করব।
গত ২ অক্টোবর অ্যাডভোকেট মো: শিশির মনিরের নেতৃত্বে পাঁচজন আইনজীবী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তারা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন এবং রিভিউ করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
এরপর ৯ অক্টোবর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তার স্ত্রী তামান্না-ই-জাহানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য। সাক্ষাৎ শেষে বেগম মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ, নির্দোষ এবং নির্দোষ।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের ওপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন এবং তা কারা কর্তৃপরে কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পরদিন ২ অক্টোবর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে রিভিউ আবেদন দায়েরের বিষয়ে পরামর্শ করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার পাঁচজন আইনজীবী সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি আইনজীবীদের রিভিউ আবেদন দায়ের করার পরামর্শ দেন।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই জানিয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই তারা রিভিউ আবেদন করবেন।
গত ১৬ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং ২৯ জুলাই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল মামলার সংপ্তি রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদেরের এ রায় দেন।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল-১ ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

No comments

Powered by Blogger.