বিদ্যালয়ের ফটকে ছাত্রী হত্যা- শুধু শাস্তি নিশ্চিত করাই যথেষ্ট নয়

কবিতা মনি দাস
বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে রক্তমাখা একটি ছুরি। রক্ত ১৬ বছরের এক কিশোরীর, যে আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এখন সে হাসপাতালের মর্গে। আর কোনো দিন ওই বিদ্যালয়ের ফটকে তার পা পড়বে না। ঘাতক বিক্রম নামের ২২ বছরের এক তরুণ। লোকজন তাঁকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছেন। তাঁকে একমাত্র আসামি করে একটা হত্যা মামলা করেছেন কিশোরীর বাবা। হত্যাকারী হত্যাকাণ্ডের সময়ই হাতেনাতে ধরা পড়ায় আইনানুগভাবে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হওয়ার কথা নয়। তবে সে জন্য যেসব প্রত্যক্ষদর্শী তাঁকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছেন, তাঁরা যেন আদালতে সাক্ষ্য দিতে যান, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত মঙ্গলবার দুপুরের এই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে আমরা কিছু মৌলিক প্রশ্ন তুলতে চাই। ঘটনার বিবরণ থেকে ধারণা করা যায়, তরুণটি ওই কিশোরীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। কিন্তু আসলে তিনি কী চেয়েছিলেন? তিনি কি কিশোরীটিকে ভালোবাসতেন? ভালোবাসা কি জবরদস্তি করে পাওয়ার বিষয়? এবং ভালোবাসলে কি শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষটিকে খুন করা যায়?
আবার এটাও সত্য যে তরুণটি পেশাদার খুনি নন, এর আগে তিনি কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি। তিনি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জীবনে তাঁর নিশ্চয়ই কিছু আশা ও স্বপ্ন ছিল। তাহলে এমন একটা গুরুতর, বিভীষিকাময় কাজ কীভাবে তিনি করতে পারলেন? কেন তিনি আর দশজন স্বাভাবিক শিক্ষিত তরুণের থেকে হঠাৎ রূপান্তরিত হলেন একজন নৃশংস খুনিতে?
এসব কথার উদ্দেশ্য এই তরুণের অপরাধকে লঘু করা নয়। তাঁর অবশ্যই আইন অনুযায়ী কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে অন্য কেউ এমন পথে যাওয়ার সাহস না পায়। তবে শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ রকম প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ হবে না। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, নৈতিকতাবোধ, নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি—এসব ক্ষেত্রে গলদ রয়ে গেছে কি না, থাকলে সেগুলো কীভাবে দূর করা যায়, সেসবও ভাবতে হবে।
বিদ্যালয়ের ফটকে ছাত্রী হত্যা
আপডেট: ১৪ অক্টোবর  ২০১৫
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ের ফটকে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে কবিতা মনি দাস (১৬) নামের এক ছাত্রী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত কবিতা কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকার বোর্ডঘর বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সে ঢাকার ধামরাই উপজেলার সাটুরিয়া গ্রামের সাগর মনি দাসের মেয়ে। সূত্রাপুরে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত কবিতা।
গ্রেপ্তার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেন কালিয়াকৈরের উত্তর কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার বিক্রম চন্দ্র সরকার (২২)। তিনি সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র।
কবিতার পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দশম শ্রেণির ছাত্রী কবিতার নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল দুপুরেও সে পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। বেলা দেড়টার দিকে বিদ্যালয়ের ফটকে পৌঁছানোর পর বিক্রম তার গতিরোধ করেন। এ সময় দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিক্রম একটি ধারালো ছুরি দিয়ে কবিতার পেটে ও কাঁধে আঘাত করেন। কবিতার চিৎকার শুনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও আশপাশের লোকজন গিয়ে বিক্রমকে আটক করে পুলিশে দেন। কবিতাকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, স্কুলছাত্রী কবিতার পেটে, বুকে ও হাতে ছুরির তিনটি আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
কবিতার নানা ননি গোপাল বলেন, বিক্রম অনেক দিন ধরে কবিতাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। চার-পাঁচ মাস আগে একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় কবিতার হাত ধরে টানাটানি করেন তিনি। পরে বিষয়টি নিয়ে বিক্রমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন কবিতাকে স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসতেন তাঁর নানি। কিন্তু নানি অসুস্থ থাকায় কয়েক দিন ধরে সে বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুলে-যাওয়া আসা করছিল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জানান, হত্যার ঘটনার পর গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল কবীর ও কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওসি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিক্রমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

No comments

Powered by Blogger.