তাভেলা হত্যায় জঙ্গি সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ

ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গতকাল পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত সুনির্দিষ্টভাবে সে বিষয়ে পুলিশ কোন তথ্য দিতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া কিলারদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলেই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা মদদদাতা রয়েছে তাদের শনাক্ত করা যাবে। এদিকে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুমায়ুন কবির হীরাকে দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ইতালিয়ান নাগরিক হত্যার সঙ্গে কোনো ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি থাকতে পারে।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুনিদের ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। পুরো প্রমাণ পেলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ কমিশনার বলেন, ‘আমাদের সময় দেন, আমাদের উপর আস্থা রাখেন, সফলতা আসবে।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ব্যক্তিদের ঘিরে তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। ওই তিনজনের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তাদের ধরতে একাধিক টিম কাজ করছে। কিলারদের ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত মোটরসাইকেল ও অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে। এরপরই হত্যার নেপথ্য কারা ছিল তা জানা যাবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ১৫৫টি ভিডিও ক্লিপ পর্যালোচনা করে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীসহ ঘটনার আনুষঙ্গিক সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের নাম-পরিচয় এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা আসবে বলে মনে করেন তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, তারা মূলত কিলারদের ধরতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। কিলারদের ধরতে পারলে তারাই বলবে কে তাদের হত্যা করতে পাঠিয়েছিল।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ইতালিয়ান নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে রাজনৈতিক বিষয়টি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর গুলশানের কূটনৈতিক জোনের ৯০ নম্বর রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা। নিহত সিজার আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। এঘটনায় তার সহকর্মী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
কুনিও হত্যায় ফের রিমান্ডে হীরা: এদিকে উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুমায়ুন কবির হীরাকে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। রংপুরের বিচারিক হাকিম আবু তালেব শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৫ই অক্টোবর হিরাকে প্রথম দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বুধবার ওই রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হয়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুনিও হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। একজন কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হিরা। অন্যজন রংপুর মহানগর বিএনপি’র সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান ওরফে বিপ্লব। বিপ্লব ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ভাই। গত ৫ই অক্টোবর হিরার সঙ্গে বিপ্লবকেও ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রিমান্ডের পঞ্চম দিনেই গত ১০ই অক্টোবর তার রিমান্ড বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুনিওর বাড়িওয়ালা গোলাম জাকারিয়া ওরফে বালা, রিকশাচালক মুন্নাফ আলী ও প্রত্যক্ষদর্শী মুরাদ হোসেন এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩রা অক্টোবর সকালে রংপুর শহরের উপকণ্ঠে কাচু আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি তার খামারে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন।

No comments

Powered by Blogger.