মুন ক্যাকটাস

সাধারণ সবুজ ক্যাকটাসের ওপর কলম করে
লাগানো মনকাড়া মুন ক্যাকটাস l প্রথম আলো
রাজশাহীর শাহীন সালেহর বাড়ির ছাদে সুশোভিত
মুন ক্যাকটাসের বাগান l ছবি: প্রথম আলো
বিদেশে নাম মুন ক্যাকটাস। দেশে রঙিন ক্যাকটাস। এই রঙিন ক্যাকটাস দিয়ে করা হচ্ছে ‘ডিস গার্ডেন’। ব্যবহৃত হচ্ছে গিফট আইটেম বা উপহারের সামগ্রী হিসেবে। রাজশাহীতে কাজটি শুরু করেছেন শাহীন সালেহ উদ্দিন (৪২)। একজন উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা। বাড়ি রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায়।
মুন ক্যাকটাসের বৈজ্ঞানিক নাম gymnocalycium, পরিবার cactaceac ও প্রজাতি mihanovichii। এই ক্যাকটাসের মধ্যে কোনো ক্লোরোফিল নেই। তাই সবুজ রঙের ক্যাকটাসের সঙ্গে গ্রাফটিং (কলম) করতে হয়, তা ছাড়া বাঁচানো যায় না। এরা সরাসরি সূর্যালোক পছন্দ করে না। এ জন্য ফাইবার শেডের (তন্তুর আবরণ বা আড়াল) নিচে রাখলে ভালো থাকে। বাড়ির দক্ষিণ বা পূর্ব বারান্দায় রাখলেও চলে। সাধারণত এরা ২০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে আর বৃদ্ধি পায় না। তখন সুপ্ত অবস্থায় চলে যেতে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে মুন ক্যাকটাস উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশে এই রঙিন ক্যাকটাসের যাত্রা শুরু নব্বইয়ের দশকের গোড়াতে। শাহীন সালেহ উদ্দিনের দাবি, সেটাও শুরু হয়েছিল এই রাজশাহীতে। জেলা চিনিকলের একজন কর্মকর্তা তাঁর বাসার ছাদে প্রথম কাজটি শুরু করেছিলেন। তখন তাঁর দেখাদেখি রফিকুল আলম, খালেদ সারোয়ার, মশিউর রহমানসহ কয়েকজন এর উৎপাদন শুরু করেন। ছাত্র অবস্থাতেই শাহীন তাঁদের এই কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হন।
২০১১ সাল থেকে সবুজ ক্যাকটাসের সঙ্গে গ্রাফটিং করে ওই ক্যাকটাস উৎপাদন শুরু করেন শাহীন। তাঁর পাশাপাশি আরও কয়েকজন রাজশাহীতে এ কাজ করছেন। তবে রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন ক্যাকটাস উৎপাদন করছেন কেবল তিনিই। তাঁর তথ্যমতে, ঢাকায় আরও একজন এ কাজটি করেন।
তবে পরিশ্রম অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় এই চর্চা বাড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন শাহীন। তিনি এবার ঢাকায় বৃক্ষমেলায় ৫০টি রঙিন ক্যাকটাস নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে পাইকারি দামে প্রতিটি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। শাহীন বললেন, বিদেশ থেকে কম দামে আমদানি হচ্ছে বলে দেশে যারা এই ক্যাকটাস নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা লাভ করতে পারছেন না।
শাহীনের বাসার ছাদে নার্সারি। এটার নাম দিয়েছেন ‘রাসা ক্যাকটাস অ্যান্ড বনসাই’। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাকটাস ছাড়াও হরেক রকমের দুর্লভ ফুল ও ফলের গাছে ঠাসা এটি। ২০১৩ সালে ছাদে বাগান, বৃক্ষসৃজন ক্যাটাগরিতে এটি প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
নার্সারিতে ফাইবার শেডের নিচে রঙিন ক্যাকটাসগুলো রাখা হয়েছে। লাল, গোলাপি, কমলা, হলুদ, কালো, সবুজ ইত্যাদি রঙের মুন ক্যাকটাস শোভা পাচ্ছে বাগানের একাংশে। গ্রাফটিং করায় মনে হচ্ছে, সবুজ ক্যাকটাসগুলো সব রঙিন টুপি পরে রয়েছে। তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।
শাহীন সালেহ বলেন, বিদেশে রঙিন ক্যাকটাস দিয়ে ‘ডিস গার্ডেন’ করা হয়। সেটা উপহারের সামগ্রী হিসেবে বেশ প্রচলিত। ডিস গার্ডেন, একটি বিশেষ টবের ভেতর কয়েকটি সবুজ ক্যাকটাস দিয়ে মাঝখানে একটি বা দুটি রঙিন ক্যাকটাসের সমন্বয়ে ছোট্ট বাগান; যা গিফট আইটেম হিসেবে সহজেই বহনযোগ্য।
শাহীন সালেহ এই ডিস গার্ডেন রাজশাহীতে গিফট আইটেম হিসেবে সীমিত আকারে চালু করেছেন। তিনি বলেন, এটা জনপ্রিয় হতে সময় লাগবে। প্রতিটি ডিস গার্ডেনের দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা। আর প্রতিটি মুন ক্যাকটাস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
শাহীনের কাছ থেকে দুটি ডিস গার্ডেন কিনেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গৃহবধূ ইশরাত রাশিদা। তিনি বললেন, গিফট আইটেম হিসেবে এটা অভিনব। তিনি আরও দুটি ডিস গার্ডেনের জন্য শাহীনকে ফরমাশ দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.