সিলেটের রেজাউলকে ঘিরে রহস্যের জাল by ওয়েছ খছরু

সিলেটে নিখোঁজের ১৭ দিন পর উদ্ধার হওয়া রেজাউলকে নিয়ে এলাকায় রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে রেজাউল আদালতে দেয়া স্বেচ্ছায় জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনি নিজ থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। আদালতে দেয়া রেজাউলের বক্তব্য মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। তার মানসিক অবস্থা এখনও বিপর্যস্ত বলে দাবি তাদের। রেজাউলের মনে ভয় ঢুকে গেছে। তিনি মুখ খোলে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। এ কারণে শনিবার স্থানীয় এলাকাবাসী রেজাউলকে ডেকেছিলেন। তাদের সামনে রেজাউল একই কথা বলেছেন। এলাকাবাসীর ধারণা, রেজাউল নিখোঁজের বিষয়টি এখনও রহস্যময়। সে এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তবেই বেরিয়ে আসতে পারে আসল কাহিনী। সাহেববাজারের স্থানীয় সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান গতকাল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই রেজাউল বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে টানা দুই দিন সে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। শনিবার এলাকাবাসী তাকে ডেকেছেন। ওখানে সে এসেছে। তিনি বলেন, এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয় রেজাউল। এ কারণে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, রেজাউল তার বন্ধুকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এখন সে সুমনের কোন ফোন নাম্বার দিচ্ছে না। ফলে তার বক্তব্য নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে। রেজাউল করিম সিলেটের সালুটিকরের এফআইভিডিবির মাঠকর্মী। রেজাউল করিম ৬ই সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মতো কিস্তির টাকা তুলতে গোয়াইনঘাটের পাইকরাজ গ্রামে যায়। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি দীর্ঘ ১৬ দিন। অবশেষে গত বুধবার রাতে রেজাউলকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের আদালতে হাজির করা হয় রেজাউলকে। ওখানে দেয়া জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। ঋণে জর্জরিত হয়েই তিনি আত্মগোপণ করেছিলেন। আদালতের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে রেজাউল বলেন, ‘আমি এফআইভিডিবির একজন কর্মসূচি সংগঠক। আমার কর্মস্থল সালুটিকরে। আমি অত্যধিক ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। ঋণের মধ্যে কিছু আমার ব্যক্তিগত ও কিছু পারিবারিক। তাই আমি প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংগ্রহ করে ৬ই সেপ্টেম্বর গোয়াইনঘাট থেকে বিকাল সাড়ে তিনটায় সিএনজি অটোরিকশাযোগে কানাইঘাট যাই। ওখান থেকে বিয়ানীবাজার যাই। ওই দিনই রাতে বাসে করে চলে যাই ঢাকাতে। তিনি জানায়, ‘৭ই সেপ্টেম্বর ঢাকার কল্যাণপুরে আমার বন্ধু সুমনের পাওনা ২৩ হাজার টাকা পরিশোধ করি। এরপর কমলাপুর রেলওয়ে  স্টেশনে পরপর দুই রাত অবস্থান করি। ওখান থেকে একটি মেইল ট্রেনে করে চলে যাই চট্টগ্রামে। আবার চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে তিন রাত অবস্থান করি। ওখান থেকে আসি কুমিরা রেল স্টেশনে। ওখানে কিছুসময় থাকার পর জালালাবাদ ট্রেনে করে ২৩শে সেপ্টেম্বর মাইজগাঁও রেলস্টেশনে আসি। সেখান থেকে পুরানবাজার বিআইডিসিতে গিয়ে বাড়িতে ফোন দিই। পরে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে ভেবেছিলাম আর বাড়িতে ফিরে আসবো না। পরে অসহায় বাবা-মার কথা চিন্তা করে আবার বাড়িতে ফিরে আসি।’ বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পুরানবাজার বিআইডিসি থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সিলেট পুলিশ সুপারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজ রেজাউল করিমকে উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে আদালতে নেন পুলিশ সদস্যরা। এর আগে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। ওখান থেকেই তাকে আদালতে তোলা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নন্দন কান্তি ধর জানান, রেজাউলের শারীরিক অবস্থা ভাল আছে। তবে তাকে দুর্বল মনে হচ্ছে। তার শরীরে কোন আঘাত ছিল না। উদ্ধারের পর রেজাউল পুলিশের কাছে বলেছিল, ছিনতাইকারীরা তাকে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা সংলগ্ন শাহ্‌ মাইয়াম শাহ (রহ.) মাজারের সামনে রাস্তায় ফেলে গেছে। পরে তিনি ওখান থেকে পুরানবাজার এসে মোবাইল ফোনে তার ভাইকে বিষয়টি জানান। তার ভাই পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানালে, পুলিশ সুপার ফেঞ্চুগঞ্জ থানাকে   রেজাউলের বিষয়টি অবগত করেছিলেন। এদিকে, রেজাউলকে ঘিরে এলাকায় রহস্য দেখা দিয়েছে। রেজাউল বাড়ি চলে যাওয়ার পর থেকে নীরব হয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত সে ঘুমিয়েছে। শুধু খাওয়ার সময় তাকে ডেকে তোলা হয়। রাতে সে এলাকাবাসীর ডাকে গেছে। কিন্তু রেজাউল আর আগের মতো নেই বলে জানান তারা। এ কারণে আজকালের মধ্যে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.