বাশারের পতন রুখতেই সিরিয়ায় রুশ সহযোগিতা: ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান মগেরিনি

সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন রুখতেই রাশিয়া দেশটিতে তার সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে এ কথা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি। এদিকে সিরিয়া সংঘাতের সমস্যার সমাধান খুঁজতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত শনিবার সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। খবর আল-জাজিরা ও এএফপির।
মিত্র রাশিয়া কিছুদিন ধরে সিরিয়ায় নতুন সামরিক অস্ত্রসরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞ সহায়তা পাঠাচ্ছে। শনিবার দেশটি সিরিয়ার বন্দর শহর লাটাকিয়ায় ৫০০ সেনা পাঠায়। এ বিষয়ে মগেরিনি আল-জাজিরাকে বলেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, সিরিয়া সরকারের পতন রুখতে চায় পুতিন সরকার। মগেরিনি আরও বলেন, তাঁর (লাভরভ) আশঙ্কা সিরিয়ার রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরো ধ্বংসের মুখে। আর সেটিই দেশটিতে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর অন্যতম কারণ। আবার রাশিয়া হয়তো নিজেদের গুরুত্বকেও তুলে ধরতে চায়।
সিরিয়াকে দেওয়া রাশিয়ার সাম্প্রতিক সামরিক সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির কিছুটা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ নেতাদের বৈঠকেও বাশার আল-আসাদের বিষয়ে অবস্থান নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সিরিয়ার সংকটের সমাধান খুঁজতে ইরানের সহযোগিতা চেয়েছে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে সিরিয়ার সংকটের সমাধান খুঁজতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই নেতা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
তবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার পক্ষ থেকে ওই টেলিফোন আলাপের কথা নিশ্চিত করা হলেও বলা হয়েছে, পুতিন সৌদি বাদশাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া পবিত্র হজ পালনের সময় পদপিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলমান বিমান হামলায় সৌদি আরবও অংশ নিয়েছে। তবে বাশার সরকারকে কোনো সহায়তা করতে রাজি নয় দেশটি। মনে করা হচ্ছে, আজ সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ার অবস্থানের বিষয়ে বক্তব্য দেবেন পুতিন।
বাশারকে আপাতত থাকতে দেওয়ার পক্ষে ক্যামেরন: এদিকে রয়টার্স জানায়, যুক্তরাজ্যের সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকা গতকাল খবর দিয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্বল্প মেয়াদে বাশারকে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়ার পক্ষে। এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে একটি ঐকমত্যের সরকার গঠন করা যাবে। সরকারের একটি বেনামী সূত্র উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘ক্যামেরন মনে করেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে ক্ষমতায় রেখে সিরিয়ার মানুষ ঘরে ফিরতে পারে—দেশটির এ রকম দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নেই।’
বাশার আসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপে না যাওয়ার এত দিনের মার্কিনসহ পশ্চিমা নীতি থেকে ক্রমেই সরে যাচ্ছেন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তারা। এতে করে চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর সিরীয় নেতার ভূমিকা নিয়ে ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যই ফুটে উঠেছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও গত সপ্তাহে বলেন, অনেক পক্ষের সঙ্গেই কথা বলা উচিত, যার মধ্যে থাকবেন আসাদও।

No comments

Powered by Blogger.