প্রমিথির মৃত্যু নানা প্রশ্ন

রাজধানীর ইস্কাটনে সরকারি কোয়ার্টারে যুগ্ম সচিবের ফ্ল্যাট থেকে তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে রমনা থানা পুলিশ। মৃতের নাম প্রমিথি রহমান (২৫)। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। শনিবার মধ্যরাতে ফ্ল্যাট থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। প্রমিথির মা আলম আরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। মেয়ে প্রমিথিকে নিয়ে তিনি ইস্কাটনের সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের ‘তমাল’ ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন। তবে, ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে রমনা থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। রমনা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। তবে, হত্যা করা হয়েছে এমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি। শরীরে কোন জখমের চিহ্নও ছিল না। মৃতের পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রমিথির বাবা মাহবুবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী। মা ও বাবার মধ্যে তালাক হওয়ায় তারা পৃথকভাবে বাস করতেন। তবে, প্রমিথি ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে তার মায়ের সঙ্গে থাকতেন। প্রমিথির মায়ের একজন সহকর্মী জানান, আলম আরা দশ দিনের জন্য দেশের বাইরে যান। শনিবার রাত ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন তিনি। এসময় খাটের ওপর মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে রমনা থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
রমনা থানার এসআই মোশারফ জানান, শনিবার রাতে খবর পেয়ে রমনা ইস্কাটনের অফিসার্স কোয়ার্টারের বি/১২/ই-২ নম্বর তমাল ভবনের দোতলার বাসা থেকে প্রমিথির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১৯শে সেপ্টেম্বর মেয়েকে ফ্ল্যাটে রেখে দেশের বাইরে যান আলম আরা বেগম। এক সপ্তাহ পরে শনিবার রাতে বাসায় ফিরে মেয়েকে খাটের ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। লাশটি উদ্ধারের সময় তার মুখের ডান পাশে পয়জন জাতীয় কালো দাগ দেখা গেছে। পেট ফুলে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে কয়েক দিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া, তার গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে প্রমিথি আত্মহত্যা করেছেন, নাকি কেউ তাকে খুন করেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানা যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে প্রমিথির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রমিথির মুখ থেকে বের হওয়া রাসায়নিক জাতীয় পদার্থের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পর বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এদিকে একমাত্র সন্তান প্রমিথির এমন মৃত্যুতে তার মা আলম আরা মুষড়ে পড়েছেন। বারবার বিলাপ করছেন তিনি। প্রমিথির আত্মীয়স্বজন ও সহপাঠীরাও কাঁদছেন। প্রমিথির সহপাঠী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইম জানান, প্রমিথি তাদের ভাল বন্ধু ছিল। সে ছিল সবার প্রিয়। আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল সে।

No comments

Powered by Blogger.