অবিরাম শরণার্থীর স্রোত, দরজা খুললেও সংশয়ে ইউরোপ

শরণার্থীদের নিয়ে দরাজ হচ্ছে জার্মানি। দরাজ হচ্ছে ফ্রান্সও। কিন্তু বিপুল শরণার্থীর স্রোত কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে ঐকমত্য পৌঁছতে পারেনি ইউরোপ। পাশাপাশি এই স্রোত থামারও কোনো লক্ষণ নেই। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কল জানিয়েছেন, এ বছরে প্রায় আট লক্ষ শরণার্থীকে জায়গা দেওয়া হবে। শরণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করতে প্রায় ৬০০ কোটি ইউরো খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কল। এর মধ্যেই প্রায় ২০ হাজার শরণার্থী জার্মানিতে ঢুকেছেন। সোমবার আরও ১১ হাজার শরণার্থীর জার্মানিতে ঢুকতে পারেন। অন্য দিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দে জানিয়েছেন, ২৪ হাজার শরণার্থীকে জায়গা দেওয়া হবে। এর মধ্যেই ভ্যাটিকান থেকে পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক পরিবার, নানা চার্চ ও ধর্মীর প্রতিষ্ঠানগুলিকে শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে বলেছেন। সব মিলিয়ে ইউরোপে শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আর কত? শরণার্থীদের নিয়ে রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কোনো ফল মেলেনি। জার্মানি ও ফ্রান্স শরণার্থীদের নিয়ে কোটা ব্যবস্থা চালু করতে চাইলেও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি রাজি হয়নি। ইউরোপের দক্ষিণপন্থী দলগুলি এই বিপুল শরণার্থীর চাপের বিরুদ্ধে প্রচার করতে শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, ছোট্ট আয়লানের মৃত্যুকে ব্যবহার করে ইউরোপের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের প্রশ্ন, জর্ডন, লেবানন, তুরস্কের মতো দেশ শরণার্থীর চাপে হাঁসফাঁস করলেও সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব-আমীরশাহির মতো দেশ এই শরণার্থীদের নিয়ে কিছুই করছে না। এ বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? পাশাপাশি, নানা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে শরণার্থীদের মধ্যে আর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকা শ্রেণির মানুষের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। গ্রিস থেকে সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া হয়ে পশ্চিম ইউরোপের পথটি মুক্ত হয়ে যাওয়ায় পরে এই ধরনের শরণার্থীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই পথটি লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকার থেকে নিরাপদ হওয়ায় এবং ইউরোপ আপাতত দরজা খুলে দেওয়ায় আরও শরণার্থী আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ক’দিনের মধ্যেই প্রায় চার হাজার শরণার্থীকে নিয়ে বেশ কিছু নৌকা গ্রিসে পৌঁছবে বলে খবর। ফলে চাপ আরও বাড়বে বই কমবে না। শরণার্থীদের নিয়ে দোলাচলে ভুগছে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ, যেমন হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থী সরকার এমনিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বানের মতে, মুসলিম শরণার্থীদের এই স্রোত খ্রিস্টীয় মূল্যবোধের উপরে প্রভাব ফেলবে। তাই প্রথম দিকে শরণার্থী ভরা ট্রেন আটকে দিয়েছিল হাঙ্গেরির প্রশাসন। পরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে হাঙ্গেরি। সেখানে শরণার্থীদের রাখার জন্য আলাদা ক্যাম্প করা হয়েছে, যেমন রোজকে শহরে। কুকুর সঙ্গে নিয়ে সশস্ত্র পুলিশ সেই সব ক্যাম্প পাহারা দিচ্ছে। সাংবাদিকদের ক্যাম্পের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই ব্যবস্থাকে অমানবিক আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু উত্তরে অস্ট্রিয়ার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে হাঙ্গেরি। রেলপথের পাশাপাশি অস্ট্রিয়া থেকে প্রায় ১০০টি গাড়ি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের একটি দল বুদাপেস্ট এসেছে। তারা সরাসরি শরণার্থীদের অস্ট্রিয়া নিয়ে যাচ্ছেন। এটি আইনবিরুদ্ধ বলে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাঙ্গেরির প্রশাসন। পাশাপাশি, দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। যেমন, অর্থের বিনিময়ে শরণার্থীদের সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।– সংবাদসংস্থা

No comments

Powered by Blogger.