সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া পশুবাহী ট্রাক থামানো যাবে না : আইজিপি

সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া হাইওয়েতে কোনো পশুবাহী ট্রাক থামানো যাবে না। যানজট নিরসন ও রাস্তার সার্বিক নিরাপত্তায় হাইওয়েতে ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হবে। এছাড়া কোরবানী উপলক্ষে কোনো অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। আজ সোমবার দুপুরে কোরবানীর ঈদের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শহীদুল হক বলেন, পুলিশের সব রেঞ্জের ডিআইজি, মহানগর পুলিশের কমিশনারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পশুবাহী ট্রাকে কোনো ধরনের কোনো মহলের চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না বলেও সতর্ক করেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, রাস্তায় পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে যাতে কোনো পক্ষই চাঁদাবাজি করতে না পারে পুলিশের পক্ষ থেকে সেটা নিশ্চিত করা হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলে পুলিশ পশুর ট্রাক থামিয়ে চেক করতে পারবে। কিন্তু পশুবাহী ট্রাকের কাগজপত্র ঠিক আছে কি-না তা যাচাইয়ের অজুহাত দিয়ে কোনো পুলিশ সদস্য যাতে গাড়ি না থামায় সে জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর এ বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সসহ প্রত্যেকটি ইউনিট থেকে মনিটরিংর করা হবে। তা ছাড়া, চাঁদাবাজি বন্ধে হাইওয়েতে গোয়েন্দা তৎপরতাও থাকবে।
কোরবানীর পশুর হাট সম্পর্কে আইজিপি বলেন, অবৈধ পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। তা ছাড়া, যেসব পশুর হাট নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে সেগুলোও বসতে দেয়া হবে না। পুলিশ পশুর হাটের নিরাপত্তা বিধান করবে যাতে কেউ নির্ধারিত সুযোগের চেয়ে অধিক কিছু হাসিল করতে না পারে।
গরু ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে আইজিপি বলেন, বড় অংকের টাকা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা চাইলে নিরাপত্তা দেয়া হবে। প্রত্যেকটি গরুর হাটে জাল টাকা যাচাইয়ের জন্য মেশিন থাকবে, সিটি করপোরেশনও জাল টাকা শনাক্তের মেশিন বসাবে।
তিনি বলেন, যেসব স্থানে পশুর হাট বসালে মানুষের চলাফেরার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র সেসব স্থানে পশুর হাট বসতে দিবে না বলে জানিয়েছেন। আর গরুর চামড়া যাতে পাচার না হয় সেজন্য ঈদের দিন থেকে ঢাকার বর্হিমুখে পুলিশি চেক পোস্ট থাকবে। তাছাড়া, পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকামুখী চামড়ার গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে পারবে।
আইজি বলেন, যানজট নিরসনে ও রাস্তার সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হাইওয়েতে ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হবে। এটি পুলিশ সদরদপ্তরসহ প্রত্যেকটি ইউনিট থেকে মনিটরিং করা হবে। আর যানজট নিরসনে ঢাকার সিটিং সার্ভিস বাইরের দূরপাল্লায় যেতে দেয়া হবে না।
সম্প্রতি সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল অভিযানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ৩৭ হাজার ৭৫১টি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। এর মধ্যে টাকা জমা দিয়ে ১১ হাজার ৩৬টি মোটর আর রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর ৩ হাজার ৫৫৬টি মোটরসাইকেল মালিক নিয়ে গেছে। তবে প্রসিকিউশন দেয়া হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৫৫টি গাড়ির। প্রসিকিউশনের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানা আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৭ টাকা। আর রেজিস্ট্রেশন বাবদ বিআরটিএ আদায় করেছে ১১১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা।
প্রবাসী হেলফ ডেস্ক গঠন
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ লক্ষ বাংলাদেশী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এসব প্রবাসীদের রেমিটেন্স কিংবা বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু তারা বাংলাদেশে এলে কিংবা দেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তারা হাইকমিশনে জানায়। হাইকমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আবার সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। পরে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় পুলিশের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু তাদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে স্পেশাল ক্রাইমের একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে একটি ‘প্রবাসী হেলফ ডেস্ক’ গঠন করেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। কোনো প্রবাসীর সমস্যা থাকলে তারা এই ০১৭৬৯-৬৯০০১৯ নম্বরে কিংবা expatriatehelp@police.gov.bd ই-মেইলে জানানোর জন্য প্রবাসীদের অনুরোধ করেন তিনি। যে কোনো প্রবাসী তাদের সমস্যার কথা বলার সাথে সাথে যেন তারা পুলিশি সেবা কিংবা প্রতারণা থেকে রক্ষা পায় সে ব্যাপারে দেশের প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর দেশের প্রত্যেকটি জেলায় হেলফ ডেস্ক গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধ
ঈদ উপলক্ষে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায় মন্তব্য করেন আইজিপি বলেন, কিছুদিন আগেও বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের সাথে কথা হয়েছে। ডিএমপি প্রায় শতাধিক অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে আটক করেছে। এনিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অডিও, ভিডিও সিডি করা হয়েছে, প্রত্যেকটি টার্মিনালে ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারনা করা হয়েছে। কিন্তু বাসের চালক-হেলপার যাত্রীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিলে আর মানুষ সচেতন হলে অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.