গুলশান থেকেই শুদ্ধি অভিযানের শুরু?

দৃশ্যত সফরটি ব্যক্তিগত। তবুও তৃণমূল থেকে কেন্দ্র- বিএনপির দৃষ্টি এখন লন্ডনে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। কী আলোচনা করছেন বিএনপির প্রধান দুনেতা। তৃণমূল নেতারা এরই মধ্যে এ সফর নিয়ে মুখ খুলেছেন। তারা দাবি তুলেছেন, এ সফরেই যেন দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এবারের লন্ডন সফরটি যে কিছুটা আলাদা তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় মঙ্গলবারই। যখন দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর তার সফরসঙ্গীর তালিকায় গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ঠাঁই মেলেনি। হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার পর মাকে পাশে বসিয়ে তারেক রহমানের গাড়ি চালানোর ছবিটিও বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের বাসার কাছাকাছি একটি বাসায় এখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। লন্ডন সফরের আগে দীর্ঘ হোমওয়ার্ক করেছেন বেগম জিয়া। এ সফর নিয়ে তিনি তার পরামর্শকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৈঠক করেছেন দল এবং জোটের নেতাদের সঙ্গে। একটি সূত্রে জানা গেছে, ছেলে এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলোচনার প্রধান ইস্যু হবে দল এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান। কারণ বিএনপির প্রধান দু’নেতাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় দলের একটি অংশ ভেতরে ভেতরে দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। দলের আন্দোলন-কৌশল আগেভাগেই পাচার করে দিয়েছেন তারা। যে কারণে আন্দোলন গড়ে ওঠতে পারেনি, সফলও হয়নি। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের অনেক কর্মকর্তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। তাই এবার শুদ্ধি অভিযানের শুরুটা হচ্ছে গুলশান কার্যালয় থেকে। গুলশান কার্যালয়ের বর্তমান কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই বাদ পড়তে পারেন। তাদের জায়গায় বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত লোক নিয়োগ দেয়া হবে। দল সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। গুলশান কার্যালয়ে রদ-বদলের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটি, তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়েও সিদ্ধান্ত হবে। তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের জন্য এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কমিটি পুনর্গঠনের কোন সম্ভাবনা নেই। পকেট কমিটি গঠন নিয়ে এরই মধ্যে খোদ বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেই উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের একটি বড় অংশ এখন আর কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। অসুস্থতাসহ নানা কারণে তারা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কিছুদিন আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও বিএনপির স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রবীণ এবং তরুণের সমন্বয়ের কথা বলেছিলেন তিনি। মহাসচিব পদ নিয়েও বিএনপির ভেতরে নানা আলোচনা চলছে। মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি অনেকটা হারিয়েই গেছে। মির্জা আব্বাসকে নিয়ে রহস্যের কোন কিনারা হচ্ছে না। নয় মাস ধরে কথিত আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার কোন অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় বিএনপির পুনর্গঠন এবং সংস্কারের বিষয়টি শিগগিরই দৃশ্যমান হতে পারে বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ গতকাল বলেছেন, দেশের সমস্যা, দেশের ভবিষ্যৎ এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে লন্ডন গেছেন খালেদা জিয়া। সেখানে দল পুনর্গঠন ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগের দিনও বিএনপির দুই জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা লন্ডন সফরে দলে সংস্কার ও পুনর্গঠন নিয়ে সিদ্ধান্তের দাবি জানান। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বৃহস্পতিবার বলেছেন, লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনায় দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আসবে, সেদিকেই এখন তারা দৃষ্টি রাখছেন। তিনি বলেন, বৈঠকের দিকেই আসলে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চেয়ে আছেন। বিএনপির বর্তমান যে সংকট, এ মুুহূর্তে দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন- মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে স্ট্যান্ডিং কমিটি পর্যন্ত এ পরিবর্তন খুবই জরুরি এবং আমাদের নেত্রী বিভিন্ন সময় আলোচনায় তা প্রকাশ করেছেন। এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানের সঙ্গে একটি পরামর্শ দরকার তার। এবং সেটি এবারের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হবে। আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছে সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই দল পুনর্গঠন করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির নাটোর জেলার নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী ব্যক্তিগত সফর বা চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন এটা ঠিক। সেখানে আমরা আশা করি আমাদের পার্টি চিফ অবশ্যই উপলব্ধি করেছেন যে গত আন্দোলনের সময় ত্যাগী নেতাদের কি ভূমিকা ছিল। আর যারা ম্যাডামকে মিসগাইড করেছেন যে আন্দোলনের ডাক দেন খুব শিগগিরই সরকার বিদায় নিবে। কিন্তু তারা ও তাদেরকে আমাদের পার্টির প্রধান আন্দোলন-সংগ্রামের সময় কোনভাবেই পান নাই।

No comments

Powered by Blogger.