ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে হাঙ্গেরির বেড়া

এবার ক্রোয়েশিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের পথ আটকাতে সীমান্তে ধারালো কাঁটা তারের বেড়া বসাচ্ছে দেশটির সরকার। শরণার্থীদের কোনোভাবেই আশ্রয় দেয়া হবে না যেন এ মূলমন্ত্র নিয়ে আঁটঘাট বেঁধেছে দেশটি। তাই সার্বিয়ার সঙ্গে ১০০ মাইল দীর্ঘ সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ শেষে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ২৬ মাইলের উন্মুক্ত সীমান্ত সিলগালা করতে উদ্যত তারা। খবর ডেইলি মেইলের। ইতিমধ্যে শত শত হাঙ্গেরীয় সৈন্য প্রেরণ করা হয়েছে সেখানে। সেনারা সেখানে বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ফের সীমান্ত খুলে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তবে খোলার সময়ই দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে কোনো সময় আবার এটি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এর আগে সার্বিয়া সংলগ্ন আটটি বর্ডারক্রসিংয়ের সাতটিই বন্ধ করে দেয় ক্রোয়েশিয়া।
দেশটির সরকারের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরির সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক দিনেই ১০ হাজারের বেশি শরণার্থী অনুপ্রবেশ করেছেন ক্রোয়েশিয়ায়। আর এ পরিস্থিতিতে সার্বিয়ার সঙ্গে বর্ডারক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। সীমান্ত খুলে দেয়ার ঘোষণার সময় ক্রোয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী জোরান মিলানোভিচ বলেছেন, এখন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ঢুকতে পারবেন। তবে আমি চাই না, আমার দেশ এই সংকটে ‘হটস্পটে’ পরিণত হোক। এ সময় তিনি জানান, তার দেশ পুরোপুরি সীমান্ত বন্ধ করবে না ঠিকই, তবে সবার মনে রাখতে হবে, ক্রোয়েশিয়া এরই মধ্যে তার ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে গেছে। সার্বিয়া হয়ে ক্রোয়েশিয়া দিয়ে জার্মানি যেতে চায় শরণার্থীরা। মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্যহত এসব শরণার্থী পথে পথে, পদে পদে জীবনমরণের লড়াই করছে। জল-জঙ্গল, মরুপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপের কোনো দেশের সীমান্তে পৌঁছালে সেখানেই থমকে দেয়া হচ্ছে তাদের যাত্রাপথ। মেসিডোনিয়া ও হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতার তোলায় এবং বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করায় শরণার্থী জার্মানির পৌঁছানোর নতুন পথ হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নেয়। ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করে। তবে ক্রোয়েশিয়া থেকে তারা স্লোভেনিয়া ঢুকছে এবং তাদের গন্তব্য জার্মানি। ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী র‌্যাংকো অস্টোজিক বলেছেন, শরণার্থীদের নিরাপদে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করতে দেয়া হলে, তারা আশ্রয় চাইতে পারে। রাজধানী জাগরেবে তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়ার তোভারনিক শহরে আসছে শরণার্থীরা। অস্টোজিক আরও জানিয়েছেন,
সার্বিয়া থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার শরণার্থী প্রবেশ করেছে ক্রোয়েশিয়ায়। বৃহস্পতিবার অস্টোজিক বলেন, যদি দেখা যায় একদিনে ৮ হাজার শরণার্থী ক্রোয়েশিয়া ঢুকছে, তবে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে। শরণার্থীরা অন্য দেশে যেসব সুবিধা পাচ্ছে, তা দিতে আগ্রহী নয় ক্রোয়েশিয়া। ২ লাখ ১৩ হাজার শরণার্থীর আবেদন ইউরোপে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার শরণার্থীর আশ্রয় আবেদন গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ সংখ্যা ২০১৪ সালের একই সময়ে আবেদনের তুলনায় ৮৫ ভাগ বেশি। ইউরোপগামী অসহায় বাস্তুহারা এসব শরণার্থীর এক তৃতীয়াংশ আসছে সিরিয়া অথবা আফগানিস্তান থেকে। শুক্রবার ইইউর জরিপ সংস্থা ইউরোস্ট্যাট এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর এএফপির। ইউরোপে যাওয়া ভিটেমাটি হারা মানুষের অধিকাংশকে আশ্রয় দিয়েছে জার্মানি, যা মোট শরণার্থীর তিন ভাগের এক ভাগ। অন্যদিকে জাতীয় জনসংখ্যার তুলনায় সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নিয়েছে হাঙ্গেরি। ইউরোস্ট্যাট জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল-জুনের মধ্যে ৮০ হাজার ৯০০ শরণার্থী আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ করেছে জার্মানি, যা ইউরোপে আশ্রয় নেয়া শরণার্থ্যর মোট সংখ্যার ৩৮ ভাগ। এর পরই আছে হাঙ্গেরি। যেখানে আবেদনের সংখ্যা ৩২ হাজার ৭০০ জন, যা মোট সংখ্যার ১৫ ভাগ। এছাড়া জাতীয় জনসংখ্যার তুলনায় সর্বাধিক অসহায় এ আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে হাঙ্গেরি। প্রতি ১০ লাখ নাগরিকের বিপরীতে ৩ হাজার ৩১৭ জনকে আশ্রয় দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে ইউরোপের অর্থনৈতিক দানব জার্মানি নিয়েছে প্রতি ১০ লাখের বিপরীতে ৯৯৭ জন। সংস্থাটি আরও জানায়, জুনের শেষ নাগাদ ঝুলেছিল প্রায় ৬ লাখ আবেদনপত্র। যাদের ৫২ ভাগ শরণার্থীদের আশ্রয়ের বন্দোবস্ত চলছে জার্মানিতে। তুর্কি উপকূলে আরেক ‘আয়লানের’ লাশ! পশ্চিম তুরস্কের সমুদ্র উপকূলে আবারও ভেসে উঠল এক সিরিয় শরণার্থীর শিশুর লাশ। শুক্রবার চার বছর বয়সী ওই শিশু মেয়েটির লাশ পাওয়া যায় বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি। আয়লান কুর্দির লাশ ভেসে ওঠার প্রায় দুই সপ্তাহ পরেই আবারও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। এনাটোলিয়া সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, ১৫ জন শরণার্থী বহনকারী এক নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ইজমির প্রদেশের চেশমি এলাকার উপকূলে তার লাশ পাওয়া যায়। কোস্টগার্ড সদস্যরা ডুবে যাওয়া নৌকার ১৪ শরণার্থীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও দুর্ঘটনার বলি হন ওই বাচ্চাটি। দুই সপ্তাহ আগে আয়লান কুর্দি নামের তিন বছরের এক সিরীয় শরণার্থীর সমুদ্র উপকূলে ভেসে ওঠার পর তা সারা বিশ্বের নজর কাড়ে। এরপর থেকেই ইউরোপের নেতাদের ওপর সারা বিশ্ব থেকে চাপ দেয়া হয় শরণার্থীদের গ্রহণ করার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.