ইউরোপের অভিবাসন সংকটের দশটি বিশ্ব বিবেক কাপাঁনো ছবি…

aylan-kurdi-2015
সম্প্রতি তুর্কী সি বিচে তিন বছর বয়সী এক সিরিয়ান শিশুর লাশ সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। একটি ছবিতেই ফুটে উঠেছে ইউরোপের অভিবাসন সংকটের নির্মম চিত্র। কিন্তু এ ধরনের আরো ছবি রয়েছে যাতে অভিবাসীদের নির্মম মুহুর্তগুলো ধারন করা হয়েছে। এসব ছবির রয়েছে বিশ্বখ্যাতিও। ইউকেবিডিনিউজ পাঠকদের জন্য দশটি চলন্ত চিত্র দেয়া হলো।

ছবি ১. ক্যানারি আইল্যান্ডের একটি স্থানীয় পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জুয়ান মেডিনা ২০০৪ সালে এই ছবিটি তুলেছেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি বলেছেন, সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে একটি ছোট নৌকা তীরের কাছাকাছি পৌছালে স্প্যানিশ সিভিল গার্ড হামলা করে। এতে নৌকাটি ডুবে যায় এবং নয়জন মানুষ মারা যান। ছবিতে দেখা যায়, দুইজন অভিবাসীকে টেনে নৌকায় তোলা হচ্ছে। এই ছবিটির জন্য এ বছর ওয়ার্ড প্রেস ফটো এওয়ার্ড পেয়েছেন ফটোগ্রাফার মেডিনা।

ছবি ২. ক্যানারি আইল্যান্ড আফ্রিকান অভিবাসীদের অন্যতম ডেসটিনেশন পয়েন্ট। ১০০০ কিলোমিটার আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে মাউন্টেনিয়া অথবা সেনেগাল থেকে আগত অভিবাসীরা এখানে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় তাদের অধিকাংশই অভুক্ত থাকে। ফলশ্রুতিতে তারা ডিহাইড্রেশনে ভোগে। ২ নং ছবিতে দেখা যায় একজন অভুক্ত অভিবাসী শিশুকে সাহায্য করছেন টুরিস্টরা। ছবিটি টেনারিফ’স লা টেজিটা বিচ থেকে তোলা। ছবিটির জন্য ২০০৭ সালে ওয়ার্ড প্রেস ফটো এওয়ার্ড পান অরটুরো রড্রিগেজ।
ছবি ৩. মরক্কোর মেডিটারেনিয়ান কোস্টে দুটি ছিটমহল অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ পথ হিসেবে সুপরিচিত। হাজার হাজার অভিবাসী এই ছিটমহল দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে। ছিটমহল দুটির নাম কেউটা এবং মেটিলা। এখানে বর্ডারে শুধুমাত্র একটা তারের বেড়া আছে। মেটিলাতে মাইগ্রান্ট রাইট গ্রুপের কর্মী জোস প্যালাজনের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশ র্ককর্তাসহ কয়েকজন অভিবাসী তারের বেড়াটি পার হওয়ার চেষ্টা করছে।

ছবি ৪. গল্ফ অফ এডেন দিয়ে অভিবাসীরা ডিজিবুতি অতিক্রম করে থাকে। মাঝে মাঝে তারা সোমালিয়ার চোরাই মার্কেট থেকে কমদামি সিমকার্ড কেনে। এতে সিগন্যাল পাওয়া প্রায়ই অসম্ভব। ছবিতে দেখা যায়, একদল মানুষ সি বিচে দাড়িয়ে মোবাইলে সিগন্যাল পাওয়া চেষ্টা করছে। ফটোগ্রাফার জন স্ট্যানমেয়ার এই ছবির জন্য ২০১৪ সালে ওয়ার্ড প্রেস ফটো পুরস্কার লাভ করেন।

ছবি ৫. ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অভিবাসীরা মেডিটারেনিয়ান পাড়ি দিয়ে থাকে। উত্তপ্ত এবং জনশুন্য এই মুরুভূমী পাড়ি দেয়ার সময় অনেক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে থাকে। তেমনি একটি ঘটনার ফলাফলচিত্র তুলে এনছেন রয়টার্সের ফটোগ্রাফার মুরাদ সেজার। তিনি বলেন, একটি পরিবার তাদের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্য পাড়ি দিচ্ছিল। জনশুন্য সিরিয়ান এলাকায় বাচ্চাটি মারা যায়। এতে বাচ্চাটির শোয়ার ছোট বিছানাটা অপ্রয়োজনিয় ভেবে ফেলে দেন বাবা-মা। ছবিটি কতটা অসহায়ত্বের প্রতিক তা এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ছবি ৬. মেসিনো সেসটিনি নামের এক ফটোগ্রাফার ইটালিয়ান নেভির একটি হেলিকাপ্টার থেকে ছবিটি তুলেন। কিন্তু পরে গত বছর আবার তিনি একই  ধরনের আরেকটি ছবি তুলেন। দুটি ছবিতে কোন পার্থক্য ছিলনা। ছবিতে দেখা যায়, পাঁচ শতাধিক মানুষ একটি নৌকায় করে সাগড় পাড়ি দিচ্ছে। কমপক্ষে পাঁচ দিনের বেশী সময় ধরে তারা সাগরের মধ্যে অবস্থান করছিল। তাদের অসহায়ত্ব ছিল অবর্ণনীয়। ফটোগ্রাফার এ ধরনের ছবি আরো তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত বছর ছবিটি ওয়ার্ড প্রেস ফটো অ্যওয়ার্ড লাভ করে।
ছবি ৭. চলতি বছর এপ্রিলে গ্রিক আইল্যান্ডের তীরবর্তি এলাকায় সিরিয়ানদের একটি কাঠের নৌকা ডুবে যায়। এসময় গ্রিক আর্মির সার্জেন্ট অ্যান্টোনিস ডেলিজিওর্জিস সমুদ্রের তীরে বসে স্ত্রীর সাথে কফি খাচ্ছিলেন। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর হাবুডুবু খাওয়া মানুষদের দেখে তিনি সাগরে ঝাঁপ দেন। এবং ৯৩ জনের মধ্যে ২০জনকে রক্ষা করেন ওই সার্জেন্ট। ছবিতে উদ্ধার কার্যের একটি চলন্ত চিত্র দেখা যায়। বাম পাশে বসে থাকা প্রেগন্যান্ট নারীটি তার সন্তানের নাম উদ্ধারকারীর নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখেন।
ছবি ৮. ছবিতে এক সিরিয়ান বাবা তার ছেলে ও মেয়েকে দুই হাতে আকড়ে ধরে রেখে কাঁদছেন। কারণ গ্রিক আইল্যান্ডে তাদের নৌকা ডুবে গেছে। যা আর চালানো যাবেনা। এমতাবস্থায় অসহায় বাবার মুখে পুরো সিরিয়ার সংকটজনক অবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে বলে টুইটারে মন্তব্য করেনমেনি ফিটজার নামের এক ব্যাক্তি। ছবিটি তুলেছেন জার্মান ফটোগ্রাফার ডেনিয়েল ইটার।

ছবি ৯. গত মাসে মেসিডোনিয়া জরুরি অবস্থা বিরাজ করলে বর্ডার বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু হাজার হাজার অভিবাসীরা রাতে বর্ডার ক্রসের চেষ্টা করে। পরের সকালে অভিবাসীরা পুলিশ বেরিকেড ভেঙে বর্ডার পার হতে চাইলে ভিড়ের মধ্যে গ্রেনেড হামলা করে পুলিশ। এপি ফটোগ্রাফার ডারকো ভোজিনোভিকের তোলা ছবিতে দেখা যায়, এব বাবা তার কন্যা সন্তানদের আকড়ে ধরে চিৎকার করছেন। এই একই পথে ৩৯,০০০ অভিবাসী সার্বিয়া হয়ে হাঙ্গেরীতে গেছেন। অথচ তারা গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছেন।

ছবি ১০. এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের মত ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, এক বাবা তার পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য কলম বিক্রি কতে যাচ্ছেন। সে একজন প্যালেস্টাইন রিফুজি। ছবিটি তোলা হয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে। তার নাম আবদুল হামিদ আত্তার। সে জানায়, তার জীবনের বড় একটি ইচ্ছা সিরিয়ার শিশুদের জন্য একটি এডুকেশন ফান্ড গড়ে তুলবেন। যদি সম্ভব হয় যত দ্রুত সিরিয়ায় ফিরে যাবেন।

No comments

Powered by Blogger.