জঠরে গুলিবিদ্ধ শিশুটি স্থিতিশীল, মা আশাবাদী

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন নাজমা বেগম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের বিছানায় শুয়ে নাজমা বেগম আশায় বুক বাঁধছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাঁর জঠরে গুলিবিদ্ধ মেয়ে দেশবাসীর দোয়ায় সুস্থ হবে। আবার স্বামীর মুখে মেয়ে অসুস্থ শুনে ভয়ও হয় তাঁর।
যে মেয়েকে নিয়ে নাজমার এই ভয় আর আতঙ্কে থাকা, সেই মেয়েও একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে ভিন্ন ওয়ার্ডে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মেয়ে ‘বেবি অফ নাজমা বেগমে’র সঙ্গে দেখা হয়নি নাজমার। তবে মায়ের দুধ সংগ্রহ করে খাওয়ানো হয়েছে তাকে। নাজমা বেগম মেয়ের ছবি দেখেছেন চিকিৎসক ও নিরাপত্তারক্ষীদের মুঠোফোনে। সেই ছবি দেখেই দুঃখ করে বলছিলেন, গুলির আঘাত, অস্ত্রোপচার, খাওয়াদাওয়া নেই—তাই তাঁর মেয়েটাকে বড্ড অসুস্থ আর ছোট দেখাচ্ছে।
মাগুরার গুলিবিদ্ধ শিশুটির জন্মের পর নয় দিন কেটে গেছে। এখনো তার নাম ‘বেবি অব নাজমা’। মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় কারিগরপাড়ায় গত ২৩ জুলাই ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম (৩৫)। গুলি মায়ের পেটে থাকা শিশুর শরীরও এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় মেয়েশিশুর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২৬ জুলাই ভোর সাড়ে চারটায় চাচা, ফুফু ও পুলিশের সঙ্গে শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছায়। নাম না রাখায় হাসপাতালে তার নাম হয় ‘বেবি অব নাজমা’। মাগুরায় চিকিৎসাধীন নাজমাকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রসূতি বিভাগে।
গুলিবিদ্ধ মেয়ের কথা বলতে গিয়ে গতকাল সন্ধ্যার দিকে নাজমা বেগম বেশ কয়েকবার দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ান। চোখের কোণ বেয়ে নিঃশব্দে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। কখনো আবার নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। মেয়ের নাম কী রাখবেন—এ প্রশ্নে একটু থেমে থেকে বলেন, ‘...লোকে তো কচ্ছে বাঁচে থাকলে আমার মেয়ে বিপ্লবী শেখ হাসিনা হবি। পেটের থ্যাকেই গুলি খ্যায়ে বারায়েছে। আমার চাচাশ্বশুরকে গুলি করিছে আমারে গুলি করার পর। সে তো বাঁচল না। আমি বাঁচলাম। আমার মণিও আল্লাহর রহমতে বাঁচে আছে।’
মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাজমা যখন নানা কিছু ভাবছেন, মেয়ে তখন স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে (স্ক্যাবু)। বেবি অব নাজমা শিশু সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক কানিজ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আছে। গতকাল রাতে কানিজ হাসিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। আজ (শুক্রবার) আমরা পরীক্ষা করে দেখলাম প্লাটিলেটের পরিমাণ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো ওকে মায়ের দুধও দেওয়া হয়েছে। অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে ঝুঁকিমুক্ত নয়।’
নাজমা তাঁর অপরিণত, কম ওজনের ছোট্ট মেয়েটার শারীরিক অবস্থা বা ঝুঁকি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানেন না। চিকিৎসককে গতকাল বারবার অনুরোধ করেছেন মেয়েকে বাঁচাতে। চিকিৎসকেরাও সর্বোচ্চ সেবার আশ্বাস দিয়েছেন। এই প্রতিবেদকের কাছেও নাজমা জানতে চান, মেয়ে কেমন আছে। ওর ভালো হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কতটুকু। নাজমা বেগম ও তাঁর স্বামী বাচ্চু ভূঁইয়া মেয়ের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.