ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুতে উত্তেজনা- নাবলুসের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ : সন্দেহ ইহুদি বসতিকারীর ওপর

অধিকৃত পশ্চিম তীরে সন্দেহভাজন ইহুদি দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দেড় বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরের কিছু আগের এ ঘটনা নিয়ে ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণ চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ জন্য ইসরায়েলের সরকারকে দায়ী করেছেন। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
নাবলুস শহরের কাছে দুমা গ্রামের এ ঘটনায় শিশুটির বাবা-মা ও বড় ভাইও গুরুতরভাবে আহত হয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে ‘যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন।
ইসরায়েলি সেনা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা দুমা গ্রামের প্রথমে ওই বাড়ির জানালা ভাঙে। পরে ঘরের ভেতরে অগ্নিবোমা ছুড়ে মারে। আগুনে ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গুরুতর দগ্ধ তার বাবা-মা ও চার বছরের ভাইকে পরে হেলিকপ্টারে করে ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাড়িটির বাইরে দেয়ালে হিব্রু ভাষায় ‘প্রতিশোধ’ কথাটি লেখা দেখা যায়।
ঘটনার পর ইসরায়েলি সেনারা সন্দেহভাজন হামলাকারীদের ধরতে গ্রামটিতে অভিযান চালায়। ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এক বছর আগে জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পশ্চিম তীরে তিন ইসরায়েলি কিশোর অপহৃত ও খুন হওয়ার বদলা নিতে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধ। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এর বিচার চাইব আমরা।’
এর আগে আব্বাস সরকারের মুখপাত্র নাবিল আবু দেইনাহ বলেন, ‘এই হামলার প্ররোচনাকারী হিসেবে ইসরায়েলের সরকারই দায়ী। দেশটির সরকার যদি পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের ওপর জোর না দিত, তাহলে এই বর্বর হামলার ঘটনা ঘটত না।’
এই হামলার জেরে জেরুজালেমে সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রবেশমুখে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েলি পুলিশ। গতকাল জুমার নামাজের পর পশ্চিম তীরের হেব্রন শহরে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে শত শত ফিলিস্তিনি পাথর ছুড়ে প্রতিবাদ জানায়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধী যেই হোক তাদের বিচারের কাঠগড়ার দাঁড় করানো হবে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি বাড়িতে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৮ মাস বয়সের একটি ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে। অভিযোগ উঠেছে ইহুদি উগ্রপন্থী বসতি স্থাপনকারীরাই বাড়িটিতে আগুন লাগিয়েছে। নাবলুসের কাছে দুমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটির নাম আলি সা'দ দাওবাসা। তার বাবা সা'দ এবং মা রেহান, এবং ভাই আহমেদও গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। তাদের নাবলুসের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ বলে বর্ণনা করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, আক্রমণকারীরা বাড়িটির দেয়ালে হিব্রু ভাষায় 'প্রতিশোধ' কথাটি লিখে দিয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সন্দেহভাজন উগ্রপন্থী ইহুদিরা ভোরবেলা ওই গ্রামে ঢোকে এবং বাড়িটিতে আগুন দেয়। এমন একসময় এই আক্রমণের ঘটনা ঘটল যখন ইসরায়েলি সরকার ও দক্ষিণপন্থী ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছে, ইসরায়েলি সরকার অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের কোনো অপরাধেরই বিচার করছে না। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনাহ এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে পুরোপুরি দায়ী করে বলেছেন, ইসরায়েলি সরকার বসতি স্থাপন এবং বসতি স্থাপনকারীদের সুরক্ষার ওপর এত জোর না দিলে এ ঘটনা ঘটত না। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিীরবতারও কড়া নিন্দা করে। অন্যদিকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এ ঘটনার পর 'দখলদার বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে' সংগ্রাম তীব্রতর করার ডাক দেয়। নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণের পরিমাণ ও মাত্রা কতটা হবে, তা নিয়ে ইসরায়েলি সরকারের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে।- বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.