হোল্ডিং কর বাড়বে না- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৫–১৬ বাজেট

নগর ভবনে বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, নগরবাসীর প্রদত্ত ট্যাক্সের পয়সার একটিও যাতে অপ্রয়োজনে কিংবা লুটপাটে খরচ না হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হবে। তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ালে বিপুলসংখ্যক মানুষ যাঁরা ভাড়াবাড়িতে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত এসব মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে না। আগের মতোই তা ১২ শতাংশ থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবন মিলনায়তনে মেয়র সাঈদ খোকন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান, সচিব খান রেজাউল করিমসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ডিএসসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র বলেন, ঢাকাকে যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরে রূপান্তর করা তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দেখেছেন, সংস্থাটি ৩৫০ কোটি টাকা দেনার দায়ে জর্জরিত। এর কার্যক্রম নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে এখন নগরবাসী নতুন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন দেখছেন। মেয়র বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করছি, উন্নততর নাগরিকসেবা দিতে আমি ও আমার কাউন্সিলর ভাই-বোনেরা সদা সচেষ্ট থাকব।’ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একটানা বৃষ্টি এবং এর কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও যানজটের কবলে পড়ে নাগরিকেরা কিছুদিন ধরে যে দুর্ভোগের মধ্যে আছেন, সে জন্য তিনি তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আয়: ডিএসসিসির চলতি অর্থবছরের বাজেটে আয়ের খাতের মধ্যে আছে রাজস্ব থেকে ৬৩২ কোটি ৯ লাখ টাকা, নিজস্ব অন্যান্য খাত থেকে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং সরকারি থোক ও বিশেষ অনুদান ৩২৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে আসবে ১ হাজার ৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
ব্যয়: সবচেয়ে বেশি ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য—১৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৯৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, পরিবেশ উন্নয়নে ৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। খেলার মাঠ, উদ্যান ও বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়নে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ , নগর জাদুঘরের জন্য ৫০ লাখ, কবরস্থান, শ্মশানঘাট উন্নয়নে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
প্রকল্প: ডিএসসিসির সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি বা পিপিপিভুক্ত প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরে ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচরের রাস্তা ও নর্দমার উন্নয়নে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চলের সড়ক, ফুটপাত ও নর্দমা উন্নয়নে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ডেমরা-ঢাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক উন্নয়নে ১০৫ কোটি টাকা, যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে গুলিস্তান ইন্টারসেকশন প্রধান সড়ক ও সংযোগ সড়কের নর্দমা ও ফুটপাতের উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা এবং জুরাইন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নর্দমাব্যবস্থার উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাশীতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণে ৫০ কোটি এবং ডিএসসিসির বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারের উন্নয়ন ও নতুন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
সমন্বিত কর্তৃপক্ষ’ জরুরি: নগরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে একটি ‘সমন্বিত কর্তৃপক্ষ’ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল বাজেট ঘোষণার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় মেয়র বিষয়টি উল্লেখ করেন। মেয়রের মতের সঙ্গে একমত নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
মেয়র বলেন, যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তিতাস, ওয়াসা, টিঅ্যান্ডটির মতো সরকারি সংস্থাগুলোকে উন্নয়নকাজে রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি দিতে হয়। একই রাস্তা যেন বারবার খোঁড়াখুঁড়ি না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কাজের সমন্বয় করতে ‘সমন্বিত কর্তৃপক্ষ’ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা আমরা বহুদিন থেকে বলে আসছি। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা এবং এর আশপাশের এলাকার কাজের মধ্যে সমন্বয় হতে পারে। দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পালাক্রমে সমন্বয় পরিষদের নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব আছে, সে জন্য সমন্বয় পরিষদ জরুরি। সমন্বয় পরিষদ হলে যত সংস্থা আছে, তারা মেয়রের আহ্বানে সাড়া দেবেন, একত্রে বসবেন। সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময় ঢাকা মহানগর উন্নয়ন ও সুশাসন সমন্বয় কমিটি হয়েছিল।’
অনেকে সমন্বিত কর্তৃপক্ষ বলতে নগর সরকারের ধারণা দেন। নজরুল ইসলাম মনে করেন, নগর সরকার অনেক বড় ব্যাপার। নগর সরকার নির্বাচিত হবে, স্বাধীনতা কতটুকু থাকবে—এসব নির্ধারণে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। যত দিন প্রকৃত গণতান্ত্রিক নগর সরকার গঠিত না হয়, তত দিন সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে কাজ করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.