গুলিবিদ্ধ শিশুর পাশে মায়ের কান্না

অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে গুলিবিদ্ধ শিশুটির। কচি শরীর যেন এতো কষ্ট সইতে পারছে না। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাকে রাখা হয়েছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। এর মধ্যেই সুদূর মাগুরা থেকে গুলিবিদ্ধ শিশুর কাছে ছুটে এসেছেন তার মা-বাবা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটিকে জন্ম দিয়ে এখনও শয্যায় তার মা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৬টি সেলাই। এ অবস্থাতেই নিজের নাড়িছেঁড়া সন্তানকে দেখার জন্য ছুটে এসেছেন তিনি। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান তারা। ঢামেক হাসপাতালজুড়ে তখন এক আবেগঘন পরিবেশ। যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি বেদনার।
গুলিবিদ্ধ শিশুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তার মা নাজমা বেগম। মায়ের কান্নার শব্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত নার্স, চিকিৎসক থেকে শুরু আশপাশের লোকজন। অঝোরে চোখের জল ফেলেছেন শিশুরটির পিতা বাচ্চা ভূঁইয়া। জন্মের পর একবারই তার মুখ দেখেছিলেন তিনি। তারপর  আর দেখা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের আগেই গত বৃহস্পতিবার শিশুটির জন্ম হয়। তখন অচেতন শিশুর মা। জ্ঞান ফেরার পর আর দেখা হয়নি তার গর্ভে জন্ম নেয়া কন্যা শিশুটিকে। বৃহস্পতিবার তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরম মমতায় কোলে নেন তাকে। চিকিৎসকরা তাকে আশ্বস্ত করে জানান শিশুটি আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে। শিশুর মা নাজমা, সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এমন অমানবিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা যেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে না যায় সরকারের প্রতি এই দাবি জানিয়েছেন নাজমা বেগম। তিনি বলেন, আমি হতভাগা মা যে জন্মের পর নিজের সন্তানকে দুধ পান করাতে পারিনি।
শিশুর ফুফু শিখা বেগম জানান, বুধবার অস্ত্রোপচারের পর কয়েকবার কৃত্রিম দুধ পান করিয়েছেন তাকে। কিন্তু তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বুধবার রাতে দু’বার বমি করেছে শিশুটি। বৃহস্পতিবার সকালেও বমি করেছে। তারপরই সকাল ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই নড়চড়া করছে শিশুটি। কখনও কান্না করছে। ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারির বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক  বলেন, অপরিণত বয়সে শিশুটির জন্ম হয়েছে। অসময়ে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বুলেটবিদ্ধ হওয়ায় এই শিশুর ঝুঁকি বেশি। সংক্রমণের ঝুঁকি মুক্ত রাখতেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল রাত থেকে শিশুটির অবস্থার কিছুটা অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ওর শরীরের প্লাটিলেট ৫০ হাজারে নেমেছে। এর পরিমাণ কমপক্ষে দেড় লাখ হওয়ার কথা। শিশুটিকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।’
নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ও তো পৃথিবীতে আসার আগে থেকেই সমস্যার মধ্যে আছে। অপরিণত জন্ম, কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া, পেটের মধ্যে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হওয়া-সবকিছুই ওর জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর। এসব মাথায় রেখেই নিবিড় তত্ত্বাবধান চলছে। ওকে নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত।’
অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, আজ সকালে হাসপাতালের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা মিলে বসেছিলেন। সমন্বিতভাবে সেবা দেয়ার জন্যই বসা হয়েছে, যাতে কোন দিক বাদ না থেকে যায়। ওই নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম। ছোট্ট শরীরে অস্ত্রোপচারের ধকল গেছে। তাই আইসিইউর বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সংক্রমণ যাতে না হয়, সে দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.