ক্ষুরধার স্মৃতিশক্তির জন্য ৯ অভ্যাস

মস্তিষ্কের নানা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে স্মৃতিশক্তি
বাড়ানো যায়, কমিয়ে আনা যায় স্মৃতিভ্রষ্টতার ঝুঁকি
পঁচিশ পেরোনোর পর থেকেই নাকি কমতে থাকে স্মৃতিশক্তি। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে— পঁচিশের পর প্রতি এক দশকে দশ ভাগ করে কমে যেতে থাকে আমাদের প্রাত্যহিক কাজকর্মে প্রয়োজনীয় ‘সচল স্মৃতি’। কিন্তু মস্তিষ্কের নানা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোও যায়। কমিয়ে আনা যায় স্মৃতিভ্রষ্টতার ঝুঁকি। স্মৃতিশক্তিকে ক্ষুরধার রাখতে নিয়মিত চর্চায় আয়ত্তে আনার মতো এমন নয়টি অভ্যাসের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
এক ঘণ্টা আগে ঘুমান
যেকোনো ধরনের ঘুমের সমস্যা, এমনকি এক ঘণ্টা ঘুম না হওয়ার বিষয়টাও স্মৃতিতে গোল পাকাতে পারে। কেননা আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামের অংশটি সারা দিনের ঘটনাবলিকে বিন্যস্ত করে সাজিয়ে রাখার কাজ করে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের এই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আপনি আরও ভুলোমনের হয়ে উঠতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মধ্য বয়সে প্রতিরাতে আট ঘণ্টার ঘুম শেষ বয়সে আলঝেইমার এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
বাম হাতটাও কাজে লাগান
প্রাত্যহিক কাজগুলো একই রকম ভাবে না করে মাঝে মধ্যে একটু অদল-বদল করুন। যে কাজটা সব সময় ডান হাতে করে থাকেন সেটা বাম হাতে করার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন সকালে দাঁত মাজার কাজটা মাঝে মধ্যে বা হাতে করুন। সকালে প্রতিদিন যে পথে অফিসে যান একদিন তা পাল্টে দেখুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাত্যহিক কাজকর্মে এমন অদল-বদল মস্তিষ্কের জন্য ভালো। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলোর একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং এসব কোষগুলো অকালে মরে যাওয়া থেকে রেহাই পায়।
চোখ বন্ধ করুন
চাবিটা কোথায় রেখেছেন খুঁজে পাচ্ছেন না? একটু সময় চোখ বন্ধ করে ভাবলেই হয়তো আপনার মনে পড়ে যেতে পারে। যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, চোখ বন্ধ অবস্থায় প্রশ্নের উত্তর দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিছু স্বেচ্ছাসেবককে এমন এক পরীক্ষায় বসানো হয়। একদলকে চোখ খোলা রেখে এবং আরেক দলকে চোখ বন্ধ রেখে উত্তর দিতে বলা হয়। এতে দেখা যায় যারা চোখ বন্ধ করে উত্তর দিয়েছেন তারা প্রায় ৭০ ভাগ সঠিক উত্তর দিয়েছেন। আর যারা চোখ খোলা রেখে উত্তর দিয়েছেন তারা ৪০ ভাগ সঠিক উত্তর দিয়েছেন। গবেষক, রবার্ট ন্যাশ বলেন,‘চোখ বন্ধ রাখলে আশপাশের কোনো কিছুতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না। এ ছাড়া এটা একটা ঘটনার বিস্তারিত মনে করতেও সাহায্য করে।’
রক্তচাপ মেপে দেখুন
উচ্চ রক্তচাপ থেকে এক সময় শিরা-উপশিরাগুলো সরু হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে স্মৃতিভ্রষ্টতা দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন মানুষদের মধ্যে স্মৃতিভ্রমের সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ যত বেশি হবে এই সমস্যাও ততটাই প্রকট হয়ে উঠতে পারে। আপনার বয়স যদি চল্লিশের বেশি হয় আর পরিবারে যদি হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে আজই একজন চিকিৎসকের কাছে যান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন
ফ্রান্সের তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, ওজন বেড়ে যাওয়া স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করতে পারে। কোনো ব্যক্তির ওজন যত বেশি হবে তার স্মৃতি তত দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা আছে। গবেষকদের ধারণা অতিরিক্ত মেদের কারণে ধমনি সরু হয়ে গিয়ে যেমন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় তেমনি মস্তিষ্কের রক্তনালিতেও এতে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে মস্তিষ্কে ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালন না হলে স্মৃতিশক্তির ওপরও তা প্রভাব ফেলতে পারে।
দর-কষাকষি চালিয়ে যান
কোনো কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে দর-কষাকষি করা অনেকেরই অভ্যাস। কিংবা কোনো কিছু সুরাহা করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এটা মস্তিষ্কের জন্য ভালো। মুদি দোকানিদের কথা ভাবুন, তাদের ছোট ছোট কত পণ্যের দরদাম মুখস্থ রাখতে হয়। আর আমরাও দোকানে গিয়ে কেনাকাটার সময় কত কথা বলি। এ সময় নাকি মস্তিষ্কের একটা বিশেষ অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। কেননা, তখন একই সঙ্গে আমাদের অনেক হিসাব মেলাতে হয়, অনেক কিছুর কথা মাথায় রাখতে হয়।
খরচাপাতির কথা মাথায় রাখুন
কেনাকাটা কিংবা দৈনন্দিন জীবনে কি পরিমাণ টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে তা হয়তো অনেকেই মনে রাখেন না। কিন্তু এই সব ছোট্ট ছোট্ট হিসাবপাতি মস্তিষ্কের প্রাত্যহিক কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। এগুলো মস্তিষ্ককে সচল রাখে। আর মাথার ঘিলু এমনই বস্তু যে আপনি যত বেশি তা খরচ করবেন ততই তা বাড়তে থাকবে। গবেষকেরা বলেন, ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ বা প্রাত্যহিক কাজকর্মে সচল থাকা স্মৃতি প্রতি এক দশকে ১০ শতাংশ করে কমতে থাকে। কিন্তু নানা অনুশীলন এই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে।
মুরগির মাংস ও মাড়ির স্বাস্থ্য
ডিমের মতোই মুরগির মাংস, মাছ ও সীম জাতীয় সবজিতে চোলিন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান আছে। এটা মস্তিষ্কের জন্য খুবই ভালো। গবেষকেরা বলছেন, চোলিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে স্মৃতিশক্তি বিকশিত হয় এবং ডেমনেশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। তবে, মুরগির মাংস বা তা থেকে তৈরি স্ন্যাক্স যাই খান না কেন ভালোভাবে ফ্লস করতে ভুলবেন না যেন। কেননা মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো না থাকাটা স্মৃতিশক্তির জন্যও খারাপ। ফলে দাঁত মাজার পাশাপাশি নিয়মিত ফ্লস করাটাও আপনাকে অনেক সুফল দিতে পারে।
নিয়মিত রুটি আর ভাত
ভেতো বাঙালির উর্বর মস্তিষ্কের রহস্য বোধ হয় ভাতেই! কেননা ভাত ও রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ মস্তিষ্কের প্রধান জ্বালানি এই কার্বোহাইড্রেট। গম ও চাল ভিটামিন-বি এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে সমৃদ্ধ। আর এর অভাবে স্মৃতিভ্রষ্টতা তৈরি হতে পারে। তবে ভাত-রুটির পাশাপাশি মাছ-মাংসও খেতে হবে। কেননা অনেকেরই মাছ-মাংসের প্রতি আসক্তি যেমন আছে তেমনি শরীরে প্রোটিনের চাহিদাও আছে।
(ডেইলি মিরর অবলম্বনে)

No comments

Powered by Blogger.